আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটি বলেছে, তারা আশা করে- অবাধ, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। এ জন্য বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ইইউর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর গুলশানে ঢাকার ইইউ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে ইইউভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ইইউর পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ঢাকায় ইইউ ডেলিগেশন প্রধান চার্লস হোয়াইটলি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একজন বলেন, আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইইউ।
সংস্থাটি বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছে। এ বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইইউর পক্ষ থেকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রত্যাশার কথা আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন বলেন, ইইউর পক্ষ থেকে বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির অতীত ইতিহাস, জঙ্গিবাদ ও আগুন সন্ত্রাসের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। তাঁরা বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে- তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জিততে পারবে না, তাই তারা সহিংসতা চায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই সম্ভব। ওবায়দুল কাদের এক পর্যায়ে বলেন, বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে তহবিল সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে প্রার্থীর তালিকা তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, গত নির্বাচনে অনেক দেশের পর্যবেক্ষক আসার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবার সে অবস্থান থেকে সরকার সরে এসেছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে গত ৮ জানুয়ারি সিলেটে এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে পর্যবেক্ষক আসতে দেওয়া হবে। আমাদের কিছুই গোপন করার নেই।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর এক চিঠিতে ইইউকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর জবাবে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির ব্রাসেলস কার্যালয় থেকে বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাসে নোট ভারবালের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, ইইউ বাংলাদেশে নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠাবে না। তবে দুই সদস্যের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করবে এবং পরামর্শ দেবে।
তাসনিম মহসিন