বঙ্গভবন ছাড়ার পর সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এখন নিকুঞ্জের নতুন ঠিকানায়। পারিবারিক আবহে সময় কাটছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হামিদের। পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেও রেকর্ড গড়েছেন তিনি। সোমবার বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জের বাসায় ওঠার পর থেকে কিছুটা বদলে গেছে ওই এলাকার চিত্র। বাসার আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আনাগোনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকুঞ্জের ৬ নম্বর বাড়ি ঘিরে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার নিকুঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, ৬ নম্বর বাড়িতে চলছে রঙ করার কাজ। স্বজনরা নিয়ে এসেছেন তোষক, বালিশসহ নানান আসবাবপত্র। দুপুরের দিকে কয়েকজন খাবার রান্না করে ওই বাড়িতে আসেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার বললেন, ‘আবদুল হামিদ সম্পর্কে আমার বেয়াই। তার প্রিয় বাইল্যা মাছ ঝুরি করে রান্না করে এনেছি। মাছের কাটা তুলে এটা রান্না করতে হয়। বাইল্যা মাছ, কাচকিসহ হাওরের কয়েক ধরনের মাছও এনেছি। সাদা ভাত আর গরুর মাংসও আনা হয়েছে।’
এরপর সেখানে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই খাবার-দাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাসার ভেতরে নেওয়ার অনুমতি দেন। এরপর ওই বাড়িতে খাবার নিয়ে যান আবদুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি।
আবদুল আজিজ জানান, আলাউদ্দিন আল সোহেল নামে উত্তরার আরেক বাসিন্দা আবদুল হামিদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। ছোট চ্যালা মাছ, দেশি মুরগি রান্না করে এনেছেন।
এরপর বাসার সামনে একটি প্রাইভেটকার ওই বাড়ির সামনে থামে। কাঠের তৈরি লাল রঙয়ের পা-দানি নিয়ে আবদুল হামিদের বাসায় ঢোকেন। জানতে চাইলে প্রাইভেটকারের ওই চালক জানান, আবদুল হামিদের ছেলের গাড়ির চালক তিনি। বাবা-মায়ের জন্য এসব পাঠিয়েছেন তার ছেলে। বিছানায় উঠতে-নামতে যাতে সমস্যা না হয় এ জন্য এটা ব্যবহার করা জরুরি।
ওই বাড়ির কেয়ারটেকার ফুল মিয়া বলেন, ‘৪-৫ বছর এহানে আছি। এইডার মধ্যে কেউ থাহে না। স্যার এইডার মধ্যে উঠবে বইল্যা ইচ্ছা অইছে। হঠাৎ কইর্যা স্যার এইডার মধ্যে ঢুইক্যা গেছে। রঙটঙ করানো হচ্ছে। নিজেরডা আছে বলে উইঠ্যা পড়ছে স্যার।’
ফুল মিয়া জানালেন, আবদুল হামিদ সকালে উঠে নাস্তা করেছেন। এরপর দুপুরের খাবার খেয়েছেন বাসায়। বাসার সব তলায় টুকটাক কাজ করানো হচ্ছে। বাড়িতে এখনও লিফট লাগানো হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে লিফট লাগানো হবে।
নিকুঞ্জের বাসায় নিচতলায় বসানো হয়েছে একটি আর্চ-ওয়ে। দর্শনার্থী যারা আসছেন তাদের নাম লেখা হয় রেজিস্ট্রার বুকে। সেটি দেখভাল করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
মঙ্গলবার দুপুরে নিকুঞ্জে ওই বাসার সামনে ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি নতুন জায়গায় উঠেছেন। সাদা পোশাকে আমরা তার খোঁজ-খবর রাখছি।’