
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানবাহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিচৌকিতে যানবাহনে তল্লাশি করছে পুলিশ।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাতভর নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে বিএনপির এক নেতার দাবি, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের ৩০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছেন কাঞ্চন পৌরসভা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কোহিনুর আলম, সহসাধারণ সম্পাদক দেওয়ান জাকির, পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মো. শিমুল, মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সিদ্ধিরগঞ্জের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী গাজী মনির, গাজী মাসুম, ফারুক হোসেন ও হজরত আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি আলফাজ উদ্দিন ও সদস্য জাহিদ হোসেন।
এদিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক আছে। বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সন্দেহভাজন যাঁদের আটক করা হয়েছে, যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাতভর জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে।
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত জেলায় অন্তত ৩০ নেতা-কর্মীকে আটকের বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। এর মধ্যে রূপগঞ্জে ৬, সোনারগাঁয়ে ৩, সিদ্ধিরগঞ্জে ৫ ও নারায়ণগঞ্জ নগরে ১৬ নেতা-কর্মী রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ঢাকায় সমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাতে পুলিশ জেলাজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে। তারা মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে গণপরিবহনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে। অনেক নেতা-কর্মীকে তারা রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ বুধবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় পুলিশ যানবাহনে তল্লাশি করছে। তল্লাশির পাশাপাশি পরিবহনের যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মহাসড়কে অন্য দিনের তুলনায় যানবাহন কম চলাচল করছে।
তিশা পরিবহনের গাড়ির চালকের সহকারী মো. রুবেল বলেন, নোয়াখালী থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত তিনটি স্থানে তাঁদের গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
নারায়ণঞ্জের মৌচাক এলাকায় তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বে থাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবীর বলেন, তাঁরা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ভোর থেকে সন্দেহজনক যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন। কেউ যাতে মাদক, অস্ত্রসহ অপতৎপরতা করতে না পারে, সে বিষয়ে তাঁরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। তবে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
জেলা বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বাস ভাড়া করেছিলেন। তাঁরা বাস ভাড়ার জন্য অগ্রিম টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসমালিকেরা প্রশাসন ও সরকারদলীয় চাপে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তাঁরা নেতা-কর্মীদের কাছে অগ্রিম হিসেবে যে টাকা নিয়েছিলেন, সেই টাকা তাঁরা ফেরত দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে নেতা-কর্মীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে যোগ দেবেন। যত বাধা দেওয়া হোক না কেন, তাদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
বাস ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী বলেন, বিএনপির কোনো লোক বাস ভাড়ার জন্য তাঁদের কাছে আসেননি। তাঁরা কারও কাছ থেকে বাস ভাড়ার জন্য অগ্রিম টাকাও নেননি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে তাঁদের সব বাস চলাচল করছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাউলাউ মারমা বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের কোথাও যেন কোনো ধরনের হামলা, নাশকতা, অপ্রীতিকর ঘটনা ও জনগণের যানমালের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে জন্য পুলিশ তৎপর আছে। পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সংখ্যাটি কত, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

















