‘নাম্বার নাইন ছাড়া দুটি ম্যাচে ছয় গোল করা বিরাট ব্যাপার’

তপু বর্মণ: ভারতের সঙ্গে কুয়েতের শেষ গ্রুপ ম্যাচটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এবারের সাফে ৮ দলের মধ্যে কুয়েতই সবচেয়ে শক্তিশালী। সুনীল ছেত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এবারের সাফে কোন দেশ এগিয়ে। সে-ও বলেছে, কুয়েত। এক গোলে পিছিয়ে পড়ে ওরা ভারতের সঙ্গে ড্র করেছে। শারীরিকভাবে কুয়েত অনেক শক্তিশালী, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও ভালো। দ্রুত ওপরে উঠতে পারে, দলটার মধ্যে ভালো বোঝাপড়াও দেখেছি। আমাদের জন্য কুয়েত বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ। আমাদের সামনে কঠিন একটা ম্যাচ।

তপু: কুয়েত মাঝখানে একাধিকবার নিষিদ্ধ ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে। যে কারণে ওরা র‍্যাঙ্কিংয়ে একটু পিছিয়ে। তবে আমি বলব, লেবাননের চেয়ে কুয়েত অনেক ভালো দল।

তপু: সাফের আগে লেবানন দল ভারতেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ৪টি ম্যাচ খেলেছে। ফলে তারা অনেকটা ক্লান্ত থেকে সাফ শুরু করে। কিন্তু কুয়েত দলটাকে শুরু থেকে সতেজ লেগেছে। সাফে তিনটা ম্যাচ খেলে ওরাও হয়তো এখন একটু ক্লান্ত। তবে সেটা অত বড় কিছু নয়। কুয়েত টানা ৮টি ম্যাচ অপরাজিত। ওদের খেলা আমার কাছে একটু আলাদা লেগেছে।

তপু: আমরা কিছু একটা করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই কুয়েতের বিপক্ষে নামব। আমরা জানি কুয়েত কতটা এগিয়ে। এই ম্যাচে আমাদের স্নায়ুর পরীক্ষা হবে। ওটাই আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নকআউট খেলায় যেকোনো কিছু হতে পারে। আমরা নিজেদের সেরাটা দেব। সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যদিও তিনটা ম্যাচ খেলে আমরাও কিছুটা ক্লান্ত।

তপু: কী বলেন ভাই, থাকবে মানে! অবশ্যই থাকবে। এক শ ভাগ চেষ্টা থাকবে। বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা।

তপু: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে আমাদের। কিন্তু আগে সেমিফাইনাল পার হতে হবে। তারপর ফাইনাল। আমাদের আসলে ম্যাচ বাই ম্যাচ টার্গেট করা উচিত। ভালো দিক হলো, সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময় আছে, টাইব্রেকার আছে। যারা ম্যাচে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে, তাদের জন্য ম্যাচটা সহজ হয়ে যাবে। সেমিফাইনালটা আমাদের জন্য হবে আরেকটা ফাইনাল। ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে আমরা মাঠে নামব। দেখা যাক কী হয়।

তপু: অন্যরা তো ভালোই বলছে। আমাদের খেলার প্রশংসা করছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, লেবাননের সঙ্গে লড়াকু ম্যাচ খেলব। ওদের বিপক্ষে ৭৭-৭৮ মিনিট পর্যন্ত কোনো গোল খাইনি। শেষ দিকে দুই গোল খেয়ে ম্যাচটা হারলেও সাফে যে আমরা হুমকি হব, সেটা সেদিনই বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক ছিল।

দেখুন, সাফে কিন্তু এখন আমাদের আন্ডারডগ ধরে। আমরা ওইভাবেই দেশ থেকে রওনা হই বেঙ্গালুরুতে। তবে আমরা ঠিক করি, আমাদের কিছু করতে হবে। মালদ্বীপের সঙ্গে আমরা ভালোভাবে কামব্যাক করেছি, ভুটানের সঙ্গেও তা–ই। এটা সম্ভব হয়েছে টিম স্পিরিট ও ঐক্যবদ্ধভাবে খেলতে পারায়। আশা করি সামনে আরও ভালো করব, দেশের জন্য কিছু করব।

তপু: মোরছালিন অসাধারণ। ও আর হৃদয় দুজন দলের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মোরছালিন। ও গোল করছে, গোল করাচ্ছে…ও দলের জন্য সম্পদ। মোরছালিন অনেক ভালো একটা ছেলে। ফুটবল খেলে ভালো কিছু করতে চায়। এটা দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, আমরা দুই ম্যাচে ৩টি করে গোল করেছি। এটা কিন্তু বিশাল ব্যাপার। সেটা সম্ভব হয়েছে মোরছালিনরা ভালো খেলায়।

তপু: গত দুই ম্যাচ আমরা নাম্বার নাইন ছাড়াই খেলেছি দুটি উইং ফরোয়ার্ড নিয়ে। আমরা এই ছকে সফল হয়েছি। ছকটা আমরা না বুঝলে পারতাম না। দলের জন্য এটা অনেক ভালো। নাম্বার নাইন ছাড়া দুটি ম্যাচে ছয় গোল করা বিরাট ব্যাপার, সাহসী ব্যাপারও। মাঝে মাঝে এমন পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে সফল হওয়া যায়।

তপু: (হাসি) এবার এখনো গোল তো করতে পারছি না, দুর্ভাগ্য। মালদ্বীপ ম্যাচে গোল পেতে পারতাম। তবে গোল করিয়েছি। আসলে দেশের জয়ে অবদান রাখতে পারলে ভালো লাগে। সেমিফাইনালে চেষ্টা করব গোল করার।

তপু: লেবাননের সঙ্গে আমরা অন্য ধরনের ফুটবল খেলেছি। ডিফেন্স জোনে ব্লক রেখে, মিডফিল্ডেও ব্লক ছিল। মালদ্বীপের সঙ্গে আমরা উইং অ্যাটাকে গিয়েছি। কাবরেরার এই কৌশলগুলো একটু আলাদা। আমাদের মানের দলের সঙ্গে কীভাবে খেলব, আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলার ধরন কী হবে, মাঠে নামার আগে যদি রপ্ত করতে পারি তাহলে ভালো। কাবরেরা সেভাবেই অনুশীলন করান। এ জন্যই কাবরেরাকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি।

তপু: সবার সঙ্গে কথা বলেন। নতুনেরা অনেক সময় কোচকে ভয় পায়, কোচের সামনে যায় না। কাবরেরার বেলায় সেটা হয় না। যখন আপনি খেলোয়াড়দের ভালোভাবে বোঝাতে পারবেন, আপন করে নিতে পারবেন; তখন মাঠে ভালো করার সম্ভাবনা থাকে।

তপু: ফুটবল অনুরাগীরা এখন হয়তো আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে। আমাদের নিয়ে তারা এখন ইতিবাচক। আমরা যেন সেমিফাইনালে দারুণ কিছু করতে পারি, এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে ঈদ মোবারক।