নাগরিকত্ব দিলে একসঙ্গে মিয়ানমারে ফিরব, ঘোষণা রোহিঙ্গাদের

0
532
এক হয়ে দাবি আদায়ের শপথ রোহিঙ্গাদের।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের আগে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে মিয়ানমারকে। এরপর বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা একসঙ্গেই ঘরে (রাখাইনে) ফিরে যাবে। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা নেতারা সংলাপে বসতেও রাজি।

আজ রোববার কক্সবাজারের এক মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন রোহিঙ্গা নেতারা। তাঁরা বলেন, কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে (রোহিঙ্গার ভাষায় গণহত্যা দিবস) আজ জেলার উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়া (ক্যাম্প-৪) আশ্রয়শিবিরের তিনটি পাহাড় ও মাঠে জড়ো হয়েছিলেন লাখো রোহিঙ্গা। সেই মহাসমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে নেতারা বলেন, ‘আমাদের সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের যদি মিয়ানমারে ফিরে যেতে হয়, একসঙ্গে যাব, একসঙ্গে সীমান্ত পার হব।’ এ সময় রোহিঙ্গারা দাঁড়িয়ে চিৎকার করে নেতাদের বক্তব্যের সমর্থন জানায়। রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ ঘিরে নেওয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। বর্তমানে টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৫০ হাজার। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু শর্ত ছাড়া কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন স্থগিত করা হয়।

রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতন এবং জড়িত সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিতে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা।

সকাল আটটা থেকে বিভিন্ন শিবির থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে মধুরছড়ার সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে। অধিকাংশ রোহিঙ্গার মাথায় টুপি, পরনে সাদা শার্ট ও লুঙ্গি। এটি রোহিঙ্গাদের জাতীয় পোশাক। স্লোগান ছিল, ‘নিরাপদে ঘরে ফিরতে চাই, গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চাই’, ‘নাগরিকত্ব ফেরত চাই’ ইত্যাদি।

সকাল নয়টার আগেই মধুরছড়ার কয়েকটি পাহাড় ও নিচের খেলার মাঠ লাখো রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে ভরে যায়। রোহিঙ্গাদের দাবি, সংকটের দুই বছর অতিবাহিত হলেও তাদের স্বদেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিয়ানমার সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এ জন্য নাগরিক মর্যাদাসহ পাঁচটি শর্ত মেনে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

সমাবেশে বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সংগঠনের সভাপতি মুহিব উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা নেতা নূর হাকিম, মো. কামাল, আবদুর রহিম, নারীনেত্রী হামিদা বেগম প্রমুখ। সমাবেশে ২০১৭ সালে আগস্টের সহিংসতায় রাখাইনে নিহত রোহিঙ্গাদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। সমাবেশে নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, ফেলে আসা জায়গাজমি ফেরতসহ পাঁচটি শর্ত মেনে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা পরবাস জীবন যাপন করছি। নিজ ভিটেমাটিতে এখনো ফিরতে পারিনি। বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্ব আমাদের দেখতে আসে, সহানুভূতি জানায়। কিন্তু কেউ আমাদের নিজ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেয়নি। এতে মিয়ানমারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসীও ব্যর্থ।’

নারীনেত্রী হামিদা বেগম বলেন, ‘দুই বছর ধরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা এখন ঘরে ফিরতে চাই। পাশাপাশি আমাদের যারা নির্যাতন করে এ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তাদের বিচার চাই।’

রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। নাগরিকত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তা পেলে শিবিরের সব রোহিঙ্গা ফিরে যাবে। এ জন্য আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপে বসতেও রাজি।’

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে মিয়ানমারকে। সঙ্গে রাখাইনে ফেলে আসা ভিটেমাটিও ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই প্রত্যাবাসন সফল হবে। ২০১২ সালে ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে যে আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে, তাদেরও নিজ নিজ বাসস্থান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয় সমাবেশে। দুপুর ১২টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। এরপর রোহিঙ্গারা দলে দলে শিবিরে ফিরে যায়।

মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের ইনচার্জ মাইন উদ্দিন বলেন, সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার তৎপর ছিল।

দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার বালুখালী ও টেকনাফের পুঁটিবুনিয়া শিবিরে পৃথক বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে নাগরিকত্বসহ পাঁচ শর্ত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.