বাছাই ডিঙাতে পারেননি আলোচিত অনেক প্রার্থী

0
87

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাচাই-বাছাইয়ের তৃতীয় দিন গতকাল রোববার সারাদেশে বেশ কয়েকজন আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সংসদের এমপি আওয়ামী লীগের মামুনুর রশীদ কিরন, দিদারুল আলম ও বজলুল হক হারুন, গণফোরামের মোকাব্বির খান, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও মাহী বি. চৌধুরীও রয়েছেন। এদিকে কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলেও টিকে গেছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

এর মধ্যে কোনো কোনোটি ঋণ ও বিলখেলাপি, ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি বকেয়া, অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, হলফনামায় তথ্য ভুল দেওয়ার কারণেও বাতিল হয়েছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আপিলের সুযোগ পাবেন। তবে বজলুল হক হারুন ও দিদারুল আলম দলীয় মনোনয়নের কাগজ দিতে না পারায় তাদের প্রার্থিতা আর ফিরে পাওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের ছাত্রনেতা শফী আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে আলোচিত হিরো আলমের মনোনয়নপত্রও।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ এবং পঙ্কজনাথ এমপির মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত করা মনোনয়নের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আজ সোমবার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ছিল গেল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে আজ সোমবার শেষ হচ্ছে বাছাইয়ের কাজ। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বাতিল ও বৈধ ঘোষিত মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিলের শুনানি ও নিষ্পত্তি করে ইসির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

আপিল গ্রহণের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন চত্বরে শামিয়ানা টানিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। এখানে আট বিভাগের জন্য আটটি প্যান্ডেলে আপিল জমা দেওয়া যাবে। এর পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিশনের উপস্থিতিতে শুনানি হবে।

এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর। এর তিন সপ্তাহ পর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোট। এর আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এই নির্বাচনের প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রাখা হয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হবে। অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকছে।

এবার ৩০০ আসনের বিপরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্রসহ মোট ২ হাজার ৭১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ২৯ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৬৬ জন। এবার সর্বাধিক ৭৪৭ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট প্রার্থীর এক-চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র। আর প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের বর্তমান এমপি দিদারুল আলম মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে এ আসনে এস এম আল মামুনকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফলে দলীয় মনোনয়নের পক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় গতকাল রোববার বাছাইয়ে দিদারুল আলমের মনোনয়ন বাতিল করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম। এ আসনে বাকি তিনজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ভোটার তালিকায় সই জটিলতা ও আয়কর জমা না দেওয়ার কারণে। তবে এস এম আল মামুনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে ঝালকাঠি-১ আসনের বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুনের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারাহ গুল নিঝুম এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ১ শতাংশ ভোটারের সই জটিলতায় এ আসনে আরও পাঁচজন এবং ঝালকাঠি-২ আসনে এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

সিলেটের ছয়টি আসনে ১৪ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়র আছেন। সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান গতকাল এ তথ্য জানান। সিলেট-২ এ বাতিল হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথের পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানসহ পাঁচজনের। মোকাব্বির খানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে দলীয় মনোনয়নের প্রমাণপত্রে নিজে নিজে সই করায়।

নোয়াখালীর ছয়টি আসনে নৌকা, বিকল্পধারার প্রার্থীসহ ১৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে নোয়াখালী-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ এবং নোয়াখালী-৪ আসনে ১৪ দলের শরিক বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান রয়েছেন। দু’জনের মনোনয়নই বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপির কারণে। তবে মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের বর্তমান এমপি। এ আসনে মনোনয়ন বাছাই হবে আজ সোমবার। মেজর মান্নানের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আবু সুফিয়ান খান জানান, সব মামলা স্থগিত এবং ঋণ হালনাগাদ আছে। নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হবে।

মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, ‘আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্লোব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নামে যত ঋণ আছে, এর সবই হালনাগাদ এবং কাগজপত্র রয়েছে। সব কিছু বলার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন বাতিল করেন। আমি আপিল করব।’

মুন্সীগঞ্জের তিন আসনে আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে আছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী। ঋণখেলাপির জামিনদার হিসেবে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু জাফর রিপন। এ আসনে আরও দু’জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তবে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ, তৃণমূল বিএনপির অন্তরা হুদা, জাতীয় পার্টির শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামসহ আটজনের মনোনয়ন।

কিশোরগঞ্জে এক নৌকার প্রার্থী, দুই হেভিওয়েটসহ ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করায় কিশোরগঞ্জ-৩ এ নৌকার প্রার্থী করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক, সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ-১ এ মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) ও কিশোরগঞ্জ-২ এ বিএনপির সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের (স্বতন্ত্র) মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। সাফায়েতুল মৃত ভোটারের সই এবং আখতারুজ্জামান হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করেছেন।

সাফায়েতুল ইসলাম জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন ছোট বোন নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির বিরুদ্ধে। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া নূর লিপির চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। সাফায়েতুল ও আখতারুজ্জামান আপিল করার কথা জানিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তাদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির সই থাকায় এটি বাদ করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কে এম গালিব খান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের ভাই। সংসদ নির্বাচনে লড়ার জন্য সম্প্রতি তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন। তবে দলীয় মনোনয়নপত্র না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে অথবা মৃত ব্যক্তির স্ত্রী তাঁর স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি না জানানোয় এমন হয়ে থাকতে পারে। আমি আপিল করব।

ভুয়া ভোটারের সই থাকার অভিযোগে রাজশাহীতে ২২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তাদের মধ্যে আলোচিত হলেন রাজশাহী-১ এ স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আয়েশা আখতার ডালিয়া। মাহিয়া মাহি বলেছেন, যে অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। আপিল করব। আশা করছি, সেখানে প্রার্থিতা ফিরে পাব।

পাবনার তিনটি আসনে বিএনএমের প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীসহ তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তাদের মধ্যে পাবনা-২ এ ক্রেডিট কার্ড-সংক্রান্ত ঋণ খেলাপির কারণে ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান। ডলি সায়ন্তনী বলেন, কার্ডের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমি দ্রুত সমাধান করে আপিল করব।

বগুড়ায় আলোচিত আশরাফুল হোসেনসহ (হিরো আলম) ১১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে চার অভিযোগে। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি।

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আশরাফুল হোসেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েও মনোনয়নপত্রে স্বতন্ত্র দাবি করেছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মোট ভোটারের এক শতাংশ সমর্থন ফরম জমা দেননি। হলফনামায় সম্পদের বিবরণী ও সই করেননি।

হিরো আলম বলেছেন, আমার মনোনয়ন বাতিল নতুন কিছু নয়। আপিল করব, প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাব। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকব। তবে মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমারও ভুল হয়েছে। দীর্ঘদিন দেশে ছিলাম না। দু’জন উকিল মনোনয়ন ফরম পূরণে ভুলগুলো করেছেন।

খুলনার তিন আসনে ১৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আলোচিত প্রার্থী হলেন খুলনা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনকারীর জাল সই, ঋণখেলাপি ও সঠিকভাবে হলফনামা দাখিল না করায় বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে মনোনয়নপত্র।

এক শতাংশ ভোটারের সইয়ে ত্রুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিওরসহ ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহগীর আলম। ফিরোজুর রহমানের অভিযোগ, আমাকে সমর্থনকারী ১০ শতাংশ ভোটারের সইয়ের মধ্যে একজনেরটি না মেলায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ওই ভোটার মীর বাইজিদ হোসাইনকে বর্তমান এমপি মোকতাদির চৌধুরীর এপিএস শুক্রবার বিয়েবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইউএনওর কাছে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করেছেন। আমি আপিল করব, প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আদালতে যাব।

নেত্রকোনার চার আসনে ১৩ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাদের মধ্যে নেত্রকোনা-৫ আসনে বাতিল হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাহউদ্দীন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তবে এ আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নৌকা প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে দাখিল করা আরও চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

ফরিদপুর-১ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। তাদের মধ্যে সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনের মনোনয়ন ফরমে প্রার্থীর ঘোষণা অংশ ফাঁকা রাখায় বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃকের হলফনামায় সই না থাকায় সেটি বাতিল হয়।

এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ২৮, মেহেরপুরের দুই আসনে ৮, টাঙ্গাইলের দুই আসনে ৯, গাইবান্ধা-১ আসনে ৪, খাগড়াছড়িতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, জয়পুরহাটের দুই আসনে ৩, দিনাজপুরের ছয় আসনে ৪, নেত্রকোনা-১ আসনে ২, লক্ষ্মীপুরের দুই আসনে ৫, যশোর-৪ আসনে ১, সিরাজগঞ্জের তিন আসনে ১০, চট্টগ্রামের পাঁচ আসনে ১২, কুমিল্লার ১১ আসনে ১৯, মানিকগঞ্জের তিন আসনে ১২, রংপুরের তিন আসনে ৪, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে ৭, শরীয়তপুর-২ আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী, জামালপুরের তিনটি আসনে ৮, নড়াইলের দুই আসনে ৩, ময়মনসিংহে ১৩, যশোরের ছয়টি আসনে ১৮ ও সুনামগঞ্জের পাঁচ আসনের মধ্যে চারটিতে ৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্যুরো, অফিস এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.