দ্বিতীয় দফায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি

0
556
ডেঙ্গু মশা

এ বছর দ্বিতীয় দফায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এবার আক্রান্তদের ৫ শতাংশ এই ঝুঁকিতে আছে। একই আশঙ্কা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি তাদের প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করেছে, তাতে এ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে।

আট সদস্যের কমিটি ২০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে সম্প্রতি আইইডিসিআরকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে, যাদের ৭ জনের ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম ছিল। এই পরিস্থিতিতে রোগীর হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ কমে যায়। রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে সেবার দরকার হয়। আর দুজনের ছিল ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। তাদের রক্তক্ষরণ হয়েছিল। চারজনের ছিল ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের সঙ্গে অন্যান্য রোগ। একজনের ছিল ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে অন্যান্য রোগ।

 

আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ বছর দ্বিতীয় দফায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় আক্রান্তদের অবস্থা জটিল হয়। চিকিৎসকেরা প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা আছে। তবে দ্বিতীয় দফায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সবার হয়তো তা নেই। তাই কমিটি প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। তবে এবার হয়তো সংখ্যাটা বাড়বে। নতুনদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ দরকার। তবে ডেঙ্গু যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এই প্রশিক্ষণ ঢাকার বাইরে দরকার বেশি।

সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ব্যবহার, প্রয়োজন না থাকলেও প্লাটিলেট দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। কারণ, এতে রোগীর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও বাড়ে।

আট সদস্যের কমিটিতে মেডিসিন ও শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রোগতত্ত্ববিদ ও ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আইইডিসিআর জানিয়েছে, হাসপাতাল, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার সবই প্রতিষ্ঠানটি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। এরপর প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা কমিটি পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করবে।

২০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে সম্প্রতি আইইডিসিআরকে প্রতিবেদন প্রদান 
পর্যালোচনা কমিটি গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় বিশেষ মনোযোগ দিতে বলেছে 
জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলার সুপারিশ করেছে কমিটি।

 

আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে কি না, তা একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে নিশ্চিত করে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এ বছর এ পর্যন্ত ২০টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করেছে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি। এর মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।

উপস্থিত সাংবাদিকেরা মৃত্যুর সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের পার্থক্যের কথা জানতে চান। তাঁরা বলেন, হাসপাতালে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে তাঁরা ৫০ টির বেশি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনার তথ্য পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘আপনারা যে সংখ্যা বলছেন, তাকে আমরা নাকচ করছি না। প্রতিটি মৃত্যুকে প্রথমে ডেঙ্গুতে সন্দেহজনক (সাসপেক্টেড) মৃত্যু হিসেবে দেখা হয়। তারপর সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা, চিকিৎসার কাগজপত্র যাচাই এবং নিকটজনের ভাষ্যের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ বের করা হয়।’

কমিটি শুধু মৃত্যুর কারণই শনাক্ত করে না, ভবিষ্যতে মৃত্যু এড়ানোর জন্য সুপারিশও করে। নয়টি সুপারিশের মধ্যে ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকা মেনে চলা ও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। করণীয় ও বর্জনীয়ের যে তালিকা নির্দেশিকায় আছে, তা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা একটি হটলাইন খোলার কথাও বলা হয়েছে। মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ হাসপাতালগুলোতে বিলি করতে বলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.