দেশে চাহিদার বিপরীত দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান দেশে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।’
রোববার সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান নসরুল হামিদ। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
একই প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের সাথে দৈনিক প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট সমতুল্য আমদানিকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।’
বিদ্যমান ঘাটতি এবং ভবিষ্যতে গ্যাস চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি বিভিন্ন ধরণের কূপ খনন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যার সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। তন্মধ্যে ১০টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে দৈনিক ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে এবং দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যমান দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির সক্ষমতা সম্প্রতি দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে এলএনজি সরবরাহের মোট সক্ষমতা দৈনিক ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। দেশি গ্যাসক্ষেত্রসমূহের গ্যাস অনুসন্ধান, উৎপাদন, ভবিষ্যতে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আনকনভেনশনাল রিসোর্স হতে গ্যাস উত্তোলন, সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি আমদানি ও পাইপ লাইনে গ্যাস আমদানির বিষয়াদি বিবেচনা করে ২০৪০-৪১ অর্থবছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস উৎপাদন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০-৩১ অর্থবছরে দৈনিক ৪ হাজার ৬০৮ মিলিয়ন ঘনফুট ও ২০৪০-৪১ অর্থবছরে দৈনিক ৫ হাজার ২৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবারাহ করা যাবে বলে আশা করা যায়।’
এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিপিসি পরিশোধিত জ্বালনি তেলের মোট আমদানির পরিমাণের ৫০ ভাগ জিটুজি এবং ৫০ ভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে বিপিসি ৬ টি দেশ (ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া) এর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি টু জি ভিত্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে।’
ভারত হতে দৈনিক ২, ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশে ২৩ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪১টি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। ভারত হতে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১ হাজার ৩০৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮ টি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াধীনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।’
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বর্তমান ইউনিটের দ্বিগুণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন পরিশোধন ক্ষমতার ১টি নতুন রিফাইনারি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পটি আগামী ২০২৮-২৯ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হবে।’