বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাফল্যের পর বজ্রপাত মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সফলভাবে এগোচ্ছে। দেশবাসীকে বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের আটটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে।
এ ছাড়া বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে সরকার।
গতকাল শুক্রবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনুকরণীয় রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। চলতি বছরে তুরস্ক ও সিরিয়ায় সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্প, মিয়ানমারে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় এবং সম্প্রতি লিবিয়ায় সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সক্ষমতার পরিচিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সমন্বিত উন্নয়ন ও সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত দুর্যোগে বাংলাদেশ পাশে আছে ও থাকবে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত হয়েছে। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ছিল স্যুভেনির প্রকাশ, ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সিপিবির স্বেচ্ছাসেবক পুরস্কার বিতরণ, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, আলোচনা অনুষ্ঠান, গোলটেবিল বৈঠক, ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি মহড়া, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার ইত্যাদি।
দিবসটি পালনের অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম ও সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো.এনামুর রহমান বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে। বিষয়টি চিন্তা করে দূরদর্শী জাতির পিতা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসরণে বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় যুগোপযোগী ও সমন্বিত দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস ও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।’