এক বছর ধরে টানা দাম বাড়ার পর অবশেষে বাংলাদেশের বাজারে চাল ও আটার দাম একসঙ্গে কমতে শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে এ দুটি পণ্যের দাম তিন মাস ধরে কমছিল। কিন্তু বাংলাদেশে দাম ওঠানামা করে বাড়তির দিকেই ছিল। কিন্তু গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দাম কিছুটা কমেছে। ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে বাড়েনি, উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ থেকে ২১ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের দাম ও নীতিবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে সব ধরনের চাল ও আটার দাম ৩ থেকে ৬ শতাংশ কমেছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২ শতাংশ কমেছে। কিন্তু খোলা তেলের দাম একই আছে।
ইউএসডিএর হিসাবে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোটা চাল ৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫৬ টাকা ও সরু চাল ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আটার মধ্যে খোলা আটা ছিল ৫৮ টাকা, আর প্যাকেটজাত আটা ৬৫ টাকা কেজি। ময়দা খোলা ৬২ টাকা ও প্যাকেটজাত ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি গুদামে চালের মজুত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে ১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ টনে। আর গমের মজুত সামান্য বেড়ে ৪ লাখ ১৮ হাজার টন হয়েছে। চালের দাম কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশে বোরো ধান কাটা শুরুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, হাওরে বোরো ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে। আগাম বন্যা না হওয়ার কারণে এবার বোরো ধান নষ্ট হয়নি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। বড় বিপর্যয় না হলে উৎপাদন ভালো হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘দেশে চালের উৎপাদন এবার বেশি হবে। বেশ কিছু জায়গায় ধানে চিটা পড়ার যে সংবাদ আমরা পাচ্ছি, তাতে মোট উৎপাদন খুব বেশি কমবে না। তবে চাল ও গমের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক উৎপাদন বাড়িয়েছেন। ওই দুটি পণ্যের উৎপাদন খরচও এবার গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। ফলে চালের দাম যাতে আর না কমে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চালের দাম বেশি হওয়ায় যেসব গরিব মানুষ কষ্টে থাকবে, তাদের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কম দামে চালের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারি গুদামে মজুত বাড়াতে হবে।’
অপরদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, বাংলাদেশে চালের উৎপাদন এবার ভালো হলেও দাম এখনো গত বছরের তুলনায় বেশি। সংস্থাটি চলতি এপ্রিলের শুরুতে বৈশ্বিক দানাদার খাদ্যবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশে চাল ও আটার দাম বেশি থাকায় তা দেশের গরিব মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান খাদ্যের উৎপাদন ও দামের ওপর প্রভাব ফেলছে বলেও সংস্থাটি মনে করছে।
বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য
ইউএসডিএর খাদ্যপণ্যবিষয়ক বৈশ্বিক আরেকটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এবার ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বে এ বছর সামগ্রিকভাবে চালের উৎপাদন কমে গেছে। কারণ, ইন্দোনেশিয়া ও ইরাকে এবার চালের উৎপাদন কম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেশি হওয়ায় তা বৈশ্বিক চালের চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করেছে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গমের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশও গম আমদানি কমিয়েছে। গমের বদলে মানুষ চাল বা ভাত খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে।