দুখুর জীবনের গল্পটাও দুঃখবাদী

0
688
মৃত্তিকা গুণ

মৃত্তিকা গুণ। নির্মাতা ও লেখক। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে নির্মলেন্দু গুণের উপন্যাস অবলম্বনে ছবি ‘কালো মেঘের ভেলা’। এটি পরিচালনা করেছেন তিনি। নতুন ছবি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তার সঙ্গে-

‘কালো মেঘের ভেলা’ উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ভাবনা কেন করলেন?

আমার বাবা নির্মলেন্দু গুণের লেখা প্রথম উপন্যাস ‘কালো মেঘের ভেলা’। ছোটবেলায় এ বইয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। উপন্যাসে অদ্ভুত ধরনের ম্যাজিক আছে। যতবারই পড়ি, কোনো এক কল্পনার জগতে হারিয়ে যাই। উপন্যাসের দুখু চরিত্রটি আমার মনে ভীষণ দাগ কাটে। দুখুর জীবনের গল্পটাও দুঃখবাদী। বাবা নেই; মা নতুন স্বামী নিয়ে সংসারী হয়েছে। দুখুর জীবনের অন্তহীন কষ্ট আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল। তাই মনে হয়েছে, বইয়ের পাতা থেকে সিনেপর্দায় দুখুকে নিয়ে আসা যায় কি-না। সে ভাবনা থেকেই ফারুক হোসেনকে দিয়ে সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা হয়। পরবর্তী সময়ে সরকারি অনুদানের জন্যও এটি নির্বাচিত হয়।

এর চিত্রনাট্য তো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপদানের কারণ কী?

ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে উপন্যাসের আঙ্গিক সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় চরিত্র দুখুর শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার মাধ্যমে উপন্যাসের শুরু হয়। কিন্তু কেন দুখু গ্রামে চলে গেছে, তা যদি পর্দায় স্পষ্ট করা না যায়, তাহলে দর্শকের ভাবনার জায়গায় কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। দুখুর বিস্তৃত কল্পনার আকাশ সিনেফ্রেম ছাড়া ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সে জন্য প্রথমে ৫৫ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির শুটিং করার পর এটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপদান করেছি।

সিনেমার পটভূমি কী নিয়ে?

দুখুর জীবনগাঁথা নিয়ে সিনেমার গল্প বোনা হয়েছে। আসলে আমাদের সবার ভেতরেই একাকিত্ব আছে। সেই একাকিত্বের প্রকাশ পেয়েছে এ সিনেমায়। ছবিটি দর্শকের মধ্যে এক ধরনের ঘোর তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস।

উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?

মূল গল্প ধরেই সিনেমার দৃশ্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। সে জন্য কমলাপুর, পুবাইল, তেজগাঁও বস্তির পাশাপাশি বারহাট্টার কাশবনে বাবার বাড়িতেও শুটিং করেছি। যেহেতু শুটিং ইউনিট অনেক বড় ছিল, তাই এতবার স্থান পরিবর্তন করে সিনেমার দৃশ্যধারণ অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ ছাড়া ট্রেনের একটি শট নেওয়ার জন্য ১০ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

রাজধানীর দুটি প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া আর কোথাও ছবিটি মুক্তি পায়নি কেন? 

নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি যে, দুটি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। অবশ্য দেশীয় সিনেমার বর্তমান অবস্থা চিন্তা করলে এটি অস্বাভাবিক বলেও মনে হবে না। তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমা না হলে হল মালিকরা প্রেক্ষাগৃহ বরাদ্দ দিতে চান না। সত্যি বলতে,

একটু ভিন্ন ধাঁচের গল্প নিয়ে দেশীয় সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। ব্যক্তিগতভাবে সে চেষ্টা করিওনি। আগামীতে ছবিটি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা আছে।

আপনার বাবা বিখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ ছবিটি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন?

সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় নির্মাতার পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’ তিনি সেটি আমাকে দিয়েছেনও। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে গল্পে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এসেছে। তবে সিনেমা দেখে তিনি বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.