দুই বরেণ্য ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ

0
218
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

রাষ্ট্রপতি পদে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির খোঁজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে দু’জন দেশবরেণ্য ব্যক্তির সঙ্গে কথাও হয়েছে। কিন্তু তাঁরা রাষ্ট্রপতি হতে চাচ্ছেন না।

এ অবস্থায় বড় ধরনের চমক না থাকলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য এই পদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম এখন পর্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই আলোচিত হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা এবং এমপি জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি পদে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে দলের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী সদস্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। এজন্য ইতোমধ্যে দু’জন খ্যাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাঁরা সম্মত হননি। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আইন বিষয়ে একজনের ব্যাপক পারদর্শিতা রয়েছে।

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই তালিকা ছোট হয়ে এসেছে। এই মুহূর্তে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এবং ড. মসিউরের মধ্যেই আলোচনা সীমিত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্য থেকেই একজনকে বেছে নেওয়া হবে বলে অনেকে মনে করছেন। এই দু’জনের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, তাঁদের রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। এই কারণেই মূলত তাঁদের দু’জনের মধ্যে একজনকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের দায়িত্ব নিয়ে কে বঙ্গভবনে যাবেন- এ নিয়ে আওয়ামী লীগে দুই ধরনের মতামত রয়েছে। বড় অংশটি নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দেখতে চাচ্ছে। আরেকটি অংশ রাষ্ট্রপতি পদে আমলা প্রত্যাশা করছে।

আগামী ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। দু’বারের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ না থাকায় তাঁর জায়গায় নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারও শপথ নেওয়ার কথা।

রাষ্ট্রপতির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচন কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এরপর তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তপশিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে ভোট গ্রহণ করা হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে।

রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না। তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য হতে একজনকে প্রস্তাবক এবং একজনকে সমর্থক হতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিজ পদে বহাল থাকবেন।

সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের দরকার হয়নি। সব সময়ই সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পাচ্ছেন। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন, এটা নিশ্চিত। সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৩০২টি আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপির সাতজন পদত্যাগ করায় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। রাষ্ট্রের প্রধান হলেও রাষ্ট্রপতির তেমন কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। সরকারপ্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করতে বাধ্য নন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর। এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তাঁর উত্তরসূরি দায়িত্ব না পাওয়া পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন।

সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেবেন। তিনি এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দেবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন- সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আগামী দিনের জন্য যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আগামী দিনের রাজনীতিতে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে যিনি সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে সংকট উত্তরণে সঠিক অবস্থান নিতে পারবেন, এমন একজনকেই রাষ্ট্রপতি করবেন প্রধানমন্ত্রী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.