ভারতে দিল্লির যন্তরমন্তর থেকে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকে দেশটির সংসদ ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনডিটিভির খবর বলছে, আটকের কয়েক ঘণ্টা পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের ফুটেজে দেখা যায়, অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকাচ্ছেন। পুলিশ তাঁদের মারধর করছে। কুস্তিগিরদের পুলিশ ভ্যানে তুলতে দেখা গেছে।
ভারতে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী এই ঘটনার পর টুইটে কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। টুইটে তিনি লেখেন, ‘কেন আমাদের কুস্তিগিরদের এভাবে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? কারও সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করা কাম্য নয়। আমি আশা করি, বিষয়টির সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে।’
ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সুনীলই প্রথম কুস্তিগিরদের সমর্থনে টুইট করলেন। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে হইচই শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী—সবাই কুস্তিগিরদের এভাবে আটক করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
টুইটে রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যখন ‘রাজ্যাভিষেক’ হচ্ছে, তখন দেশের জন্য সম্মান এনে দেওয়া কুস্তিগিরদের রাজপথে ফেলে মারা হচ্ছে। ঘটনার ছবি দিয়ে হিন্দিতে টুইট করেছেন রাহুল।
কুস্তিগিরেরা ভারতের জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান ব্রিজভূষণ শরণের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন। নাবালিকা এক কুস্তিগিরকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে যন্তরমন্তরে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছেন কুস্তিগিরেরা।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগত ও বজরং পুনিয়ারা রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই অলিম্পিক এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতের জন্য পদক এনে দিয়েছেন। ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন। আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে তাঁরা যন্তরমন্তরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
গতকাল কুস্তিগিরদের আটক করার পর রাতে দিল্লি পুলিশ বলেছে, কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দাঙ্গা করা, পুলিশকে হেনস্তা করা এবং আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধারা আছে।
কুস্তিগিরদের আন্দোলন ঘিরে নতুন প্রশ্ন সামনে এসেছে। ২০২৩ সালে চীনে এশিয়ান গেমস ও ২০২৪ সালে অলিম্পিক গেমস রয়েছে। দুই গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে ভারতীয় কুস্তিগিরেরা আদৌ অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আন্দোলনের কারণে পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা চর্চা করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে আদৌ কুস্তিগিরদের দুই গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফেডারেশন অবশ্য বলেছে, এ প্রশ্ন অবান্তর ও অমূলক।
ভারতের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, কুস্তিগিরদের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু এর প্রভাব সার্বিকভাবে ভারতীয় খেলার ওপর পড়বে না। কুস্তিগিরেরা সব ইভেন্টেই অংশ নেবেন।