শেরপুরের কামারের চর ইউনিয়নে দশআনী নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। খরস্রোতা নদীর পেটে চলে যাচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মণ্ডল। সবকিছু ঠিকঠাক দেখেই গত ১৭ আগস্ট রাতে ঘুমাতে যান তিনি। পরদিন ভোরে নদীর গর্জন শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তাঁর গোয়ালঘর, নলকূপ নদীতে চলে গেছে। গত দুই বছরে নদীর তাণ্ডবে পথে বসার অবস্থা হয়েছে তাঁর। কেবল সাইফুদ্দিন মণ্ডল নন, তাঁর মতো অনেক কৃষকের বসতভিটা ও ফসলি জমি এখন দশআনীর পেটে। হুমকির মুখে রয়েছে ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর চরের অনেক বসতবাড়ি, ফসলি জমি।
পাঁচ বছর ধরে ভাঙছে দশআনী নদী। ভাঙতে ভাঙতে ৭ নম্বর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বপাড়া জামে মসজিদ, মদিনাতুল উলুম নূরানিয়া হাফেজিয়া কওমি মাদ্রাসার কাছে চলে এসেছে নদী। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব স্থাপনা নদীতে বিলীন হতে পারে।
কথা হয় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সোয়াইদ ও তাহমিদা আক্তারের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, যদি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা নদীতে চলে যায়, তাহলে কোথায় পড়াশোনা করবে তারা। সোয়াইদ জানান, এই বিদ্যালয় না থাকলে তার মতো শতাধিক শিশুর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর আশপাশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। সারা বছর ধান, পাট, শাকসবজি চাষ করে পেটের ভাত জোগাড় করেন তারা। প্রতি বছর নদী ভাঙলেও এসব মানুষের জন্য যেন কোনো ভাবনা নেই প্রশাসনের।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মদিনাতুল উলুম নূরানিয়া হাফেজিয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নদী ভাঙছে। অথচ আমরা কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কেউ আমাদের যন্ত্রণা বোঝে না। আমরা নিংস্ব হইয়া গেলে তাদের কিছু যায়-আসে না।’ তাঁর দাবি, স্থানীয় বাসিন্দা নওশেদ বেপারি, মোফাজ্জল বেপারি, গোলাম মোস্তফা, হাতেম বেপারি, বাছির উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, আলতাব হোসেনসহ কমপক্ষে ৫০ জনের কয়েকশ একর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে অর্ধশতাধিক পরিবার ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কামারের চর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এবার ভাঙনের মাত্রা বেশি। চরাঞ্চলের বালুমাটি একবার ভাঙা শুরু করলে ধরে রাখা কঠিন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। পরিষদ থেকে কিছু সহায়তা দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় আপাতত ২০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে। পরে স্থায়ী সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শেরপুর সদর ইউএনও মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।