দক্ষতার ঘাটতি বর্তমান তরুণ সমাজের উন্নয়নের পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার ঘাটতির কারণেই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ ছাড়া জীবনমুখী শিক্ষার অভাব এবং শিক্ষা ও শ্রমবাজারের মধ্যে একটা শূন্যতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জে রয়েছে দেশের তরুণ সমাজ।
‘তরুণ সমাজের নাজুকতা নিরূপণ’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় এসব চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং– সানেম ও উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, সানেমের গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা। বিষয়ের ওপর একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী ইসরাত শারমিন।
সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজের সমস্যার সমাধান করলেই জাতির অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তরুণ সমাজের সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। সরকারের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথায় মন্ত্রী বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার ফলে এখন যুবকরা প্রথাগত চাকরির পেছনে না ঘুরে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের জীবিকা খুঁজে নিচ্ছেন। এ সুবিধা শতভাগ কাজে লাগাতে প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ দেশের সব অঞ্চলে সমানভাবে পৌঁছানো প্রয়োজন। বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পও যুবকদের সম্ভাবনা বিকশিত করার সুযোগ উন্মুক্ত করবে।
সানেমের গবেষণায় বলা হয়, তরুণ সমাজের মূল ভাবনার বিষয় হচ্ছে বেকারত্ব, পারিবারিক কল্যাণ, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং মানসম্পন্ন জীবনযাপনের সুযোগ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি, কাঙ্ক্ষিত চাকরির সীমিত সুযোগ, দারিদ্র্য এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ইত্যাদি সংকট রয়েছে।
ফারাহ কবির বলেন, তরুণ সমাজের সার্বিক উন্নয়নে তাদের জন্য জীবনমুখী কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সায়মা হক বিদিশা বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। জনমিতির সুবিধা কাজে লাগাতে এদের শিক্ষা, দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে তরুণদের সম্ভাবনা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক তরুণের শিক্ষা ও দক্ষতায় ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে জাতীয় একটি নীতি কাঠামো প্রয়োজন। তবে সব তরুণের সমস্যা একরকম নয়। প্রতিবন্ধী ও নারীদের সমস্যা ভিন্ন। এ কারণে একটি অভিন্ন নীতি কাঠামো দিয়ে সব তরুণকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারণে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।