থানায় ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ, তদন্তে কমিটি গঠন

0
181

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন। ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

মামলার আসামির আত্মীয়কে নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফরের চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর।

আবু জাফর বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজুর। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারী আজ দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হন। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা এলাকার এক ব্যক্তি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করেছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.