তোফাজ্জলের পর চুরির অপবাদে শ্রীপুরে আরেক যুবককে পিটিয়ে হত্যা

0
17
ইসরাফিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই একইভাবে গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসরাফিল নামের এক যুবকের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বসতঘর থেকে তুলে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে গায়ে গরম পানি ঢেলে ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ১৩ দিনের চিকিৎসা শেষে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসরাফিলের মৃত্যু হয়।

পেশায় নির্মাণ শ্রমিক মোঃ ইসরাফিল (২৪) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মোঃ নাসির উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়ির বসতঘরে ঘুমিয়ে ছিল ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে, স্থানীয় বেপারী বাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চায়।

পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির অদূরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে নিয়েই তার হাত-পা রঁশি দিয়ে বেঁধে ফেলে অভিযুক্তরা।

তারপর ইসরাফিলের ওপর চলে ব্যাটারী চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। পরে কোমড়ের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয় তারা। গরম পানিতে যুবকের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমড় পর্যন্ত ফোঁসকা পড়ে যায়।

এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীরা ইসরাফিলের বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মারতে মারতে চোর পেটানোর উৎসব শুরু করে উল্লাসে মেতে ওঠে। পুরো ঘটনায় নিহতের কোনো স্বজনকে তার ধারে কাছেও ঘেষতে দেয়া হয়নি। স্বজনরা কাছে যেতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মন্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মো. ইসরাফিলের বাবা। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।

মূল অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটন (৫০) শৈলাট গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। সে গাজীপুর ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কামরুল হাসান লিটনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ইসরাফিলের ওপর ওই নির্যাতন চালান।

নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, বসতঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শৈলাট পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আমার ছেলেকে কয়েক ঘণ্টা পেটায় অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে চায়ের দোকান থেকে গরম পানি নিয়ে আমার ছেলের ওপর ঢেলে দেয়। এতে কোমড়ের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁসকা পড়ে যায়।

পেটানোর সময় আমার ছেলে পানি পান করতে চেয়েছিল জানিয়ে নিহতের বাবা বলেন, ছেলেটা তার জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু জীবন ভিক্ষা তো দূরের কথা তারা পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। আমরা এত চেষ্টা করেছি তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.