স্রোতে গা ভাসানো মানে কমার্শিয়াল গান করা– সেটা ওভাবে চাই না, যা অনেকের চাওয়া থাকে। যদি গানের কথা, সুর ভালো লাগে গাইব– তবে শুরুতেই যদিও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজ করতে বলা হয়, তাহলে পিছিয়ে আসাটাই শ্রেয় মনে করব।
আভাস ব্যান্ডের একটা নতুন গান প্রকাশ পাবে আগামী মাসে। শিরোনাম ‘সত্তা’। তানযীর তুহীনের কথা ও সুরের এই গানটি এখন কম্পোজিশনে ব্যস্ত আভাস ব্যান্ডের সদস্যরা। নতুন খবর এটুকুই। আরেকটু দূরের খবর হলো– আগামী বছর এই ব্যান্ডটি তুহীনের কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী একটি গান রেকর্ড করবে। পাশাপাশি কিছু মৌলিক গানও বছরের বিভিন্ন সময় প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। আর চমকে দেওয়ার মতো খবর হলো– ৫৫ বছর বয়সে সংগীতাঙ্গন থেকে অবসর নেবেন তানযীর তুহিন। কেন তাঁর এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়েই বিস্তর আলোচনা করা যায়।
তবে এখনও যেহেতু অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সময় আসেনি, তাই সেই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না। তার বদলে আলোচনায় বেছে নিয়েছি আলাদা কিছু বিষয়। শুরুতেই জানতে চেয়েছিলাম, গানের ভুবনে দুই দশকের পথ পরিক্রমার পর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবেন কিনা? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে গান গেয়ে কি পাওয়া উচিত, কি পাইনি তা নিয়ে সত্যি ভাবিনি। মাধ্যম যেটাই হোক; মানুষ গান শুনুক, গানগুলো বেঁচে থাকুক– এটাই আমার চাওয়া।’
নিজের গান নিয়ে এমনই প্রত্যাশার কথা শোনালেন নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পী। যে কথায় স্পষ্ট, খ্যাতি নয়, অর্থের মোহেও গান করেন না তিনি। সৃষ্টির উপস্থাপনাই তাঁর কাছে মুখ্য। যে কারণে তিনি এ কথাও বলেন, ‘কেউ যদি আমার বা আমাদের ব্যান্ডের গান ভালোবেসে গায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা তুলে ধরে কিংবা স্টেজে পারফর্ম করে– তাতেও আপত্তি নেই। যার নিজের গান নেই, সে কি অন্য কারও গান গাইতে পারবে না? তাঁর কি এই ইচ্ছা হতে পারে না– প্রিয় গান কণ্ঠ তুলে নেওয়ার, সবাইকে শোনানোর? আমার মনে হয়, ভক্ত-অনুরাগীদের এটুকু অধিকার থাকেই। তবে একটা বিষয় আমি তাদের বলব, গানের স্বীকৃতিটা যেন তারা মূল শিল্পী, গীতিকার, সুরকারদের দেয়।’
তুহীনের মুখে এমন কথা শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন। কেননা, নিজের গান অন্য কেউ কাভার করবে– এটা মেনে নেওয়া অনেকের জন্যই কঠিন। তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতেই জানতে চাওয়া, নিজস্ব এই ভাবনার কারণেই কী জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরও স্রোতে গা ভাসাতে নারাজ? তুহীন বলেন, ‘স্রোতে গা ভাসানো মানে কমার্শিয়াল গান করা– সেটা ওভাবে চাই না, যা অনেকের চাওয়া থাকে। যদি গানের কথা, সুর ভালো লাগে গাইব– তবে শুরুতেই যদিও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজ করতে বলা হয়, তাহলে পিছিয়ে আসাটাই শ্রেয় মনে করব।’
তাহলে কি নির্দিষ্ট শ্রেণির শ্রোতার কথা ভেবেই সংগীত সৃষ্টি করে যেতে চান? এর জবাবে তুহীন বলেন, ‘এভাবে কখনও ভাবি না। চাই মনের গহিন থেকে তুলে আনা অনুভূতি, দৃশ্যমান বাস্তবতা, জীবনের অনুষঙ্গ– এমন অনেক কিছুই গানের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করতে। আমরা বিশ্বাস করি, সময়ের সঙ্গে মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, ভাবনার বদল ঘটবে। সস্তা জনপ্রিয় উপকরণের বাইরেও মানুষ নিখাদ জিনিস বেছে নেওয়া শুরু করবে। সে ধরনের মানুষ এখন হয়তো কম, কিন্তু কখনও কি তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে না? মেধা-মননের যত বিকাশ ঘটবে, মানুষের রুচিও ততটা বদলে যাবে। তাই আমাদের গানের শ্রোতা কম হলেও তা নিয়ে আফসোস নেই। তাই এই টিকটক যুগে এসেও সত্তা জনপ্রিয়তার মোহ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পেরেছি। হোক না গুটিকয়েক শ্রোতা, তবু তাদের মাঝে যদি আমাদের গান বেঁচে থাকে, তাহলেই শিল্পী জীবন সার্থক বলে মনে করব।’