রাজবাড়ীসহ সারা দেশের গ্রামগঞ্জে তালগাছ হলেই দেখা মিলত বাবুই পাখির বাসা। আর ছোটবেলায় এ কবিতা কে না পড়েছে, ‘বাবুই পাখীরে ডাকি, বলিছে চড়াই,/“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই…”’। রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতাটির পঙ্ক্তি এটি। এ কবিতা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবুই পাখির নয়নাভিরাম শৈল্পিক বাসা। তবে দিন দিন তালগাছও যেমন কমে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বাবুর পাখির আনাগোনা আগের তুলনায় অনেক কমে যাচ্ছে। রাজবাড়ীতে আগে গ্রামীণ এলাকার পথেপ্রান্তরে সর্বত্রই চোখে পড়ত বাবুই পাখির নয়নাভিরাম বাসা। সেই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কিন্তু নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসার ঐতিহ্য। এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও পাখিপ্রেমী সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার দ্বাদশী, রামকান্তপুর ও বানিবহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এখনো বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তালগাছে বাবুই পাখি বাসা চোখে পড়ে। সরেজমিনে সেসব এলাকা ঘুরে এ তথ্যের সত্যতা মেলে। দেখা যায়, কোনো পাখি তালগাছের ডালে বসে আসে। কোনো পাখি বাসা তৈরি করছে। কোনো পাখি ওড়াউড়ি করছে। বাবুই পাখির বাসা দেখতে অনেকেই আসছেন, মুঠোফোনে তুলছেন ছবি। কেউ কেউ পেছনে তালগাছ আর বাবুইয়ের বাসা রেখে তুলছেন সেলফিও।
রামকান্তপুর ইউনিয়নের বারলাহুরিয়া গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী নাফিজ হাসনাইন বলেন, ‘আমাদের এই তালগাছে আগে অনেক বাবুই পাখি বাসা তৈরি করত। এখনো বাসা তৈরি করে। কিন্তু দিন দিন পাখির আনাগোনা আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে। আমরা পাখিদের কোনো উৎপাত করি না। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে আমাদের খুব ভালো লাগে।’
বরাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুস সাত্তার শেখ বলেন, ‘আগে আমাদের এলাকায় প্রচুর তাল ও খেজুরগাছ ছিল। দিনরাত পাখির কিচিরমিচির শব্দ এলাকা মুখর হয়ে থাকত। এখন আগের চেয়ে তালগাছ কমে গেছে। পাশাপাশি পাখিও কমে গেছে। এখন আমাদের এখানে একটি গাছে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করেছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ বাবুই পাখির বাসা দেখতে আসে। ছবি তোলে। ভিডিও করে। আমাদের ভালো লাগে।’
রাজবাড়ীর চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় খান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে একটি স্থানের নামকরণ করা হয়েছে তালতলা। একসময় সেখানে অনেকগুলো তালগাছ ছিল। এ কারণে এই নামকরণ। তবে এখন আর সেখানে তালগাছ নেই। সব তালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। একই সঙ্গে খেজুরগাছের অবস্থাও শোচনীয়। অধিকাংশ খেজুরগাছ বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।’
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, বাবুই পাখি জীববৈচিত্র্যের একটি উপাদান। পাখি না থাকলে বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। নানা কারণে গাছ নিধন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।