বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে মানুষ আনার লক্ষ্যে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে ভাড়ার বিনিময়ে আগামী বৃহস্পতিবার এসব বিশেষ ট্রেন সরবরাহ করছে। এ ছাড়া সমাবেশে আগতদের সুবিধার্থে নিয়মিত চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে বাড়তি কোচ সংযোজন করা হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ ট্রেনগুলো চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব ট্রেন পরিচালনার বিনিময়ে রেলওয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ভাড়া পাবে।
আগামী বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে। প্রায় ১৭ বছরের বেশি সময় পর যুক্তরাজ্য থেকে তারেক রহমানের এই ফেরাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ আয়োজন করছে বিএনপি। এ উপলক্ষে রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়কে সংবর্ধনার আয়োজন করেছে দলটি।
রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেন/অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের যাতায়াতের জন্য ১০টি পথে (রুটে) বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।

এই বিশেষ ট্রেনগুলোর চলাচল নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত চলাচলকারী কিছু ট্রেনের স্বাভাবিক যাত্রা এক দিনের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এই ট্রেনগুলো হচ্ছে—রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী-পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা-রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর-রাজশাহী)। ওই রুটগুলোতে চলাচলকারী ট্রেনের নিয়মিত যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেলওয়ের সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে ১১টি বিশেষ ট্রেন চালুর আবেদন করা হয়েছিল। ইঞ্জিন–সংকটের কারণে শেষ পর্যন্ত ১০টি ট্রেন বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ট্রেনে ১৭টি বাড়তি কোচ যুক্ত করা হচ্ছে।
যেসব রুটে বিশেষ ট্রেন
বিএনপির চাহিদার ভিত্তিতে যেসব বিশেষ ট্রেন চালু করা হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে কক্সবাজার থেকে ঢাকা, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা, টাঙ্গাইল-ঢাকা, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা, গাজীপুরের জয়দেবপুর-ঢাকা সেনানিবাস, পঞ্চগড়-ঢাকা, খুলনা-ঢাকা, পাবনার চাটমোহর-ঢাকা সেনানিবাস, রাজশাহী-ঢাকা এবং যশোর-ঢাকা। প্রতিটি ট্রেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় এসে কর্মসূচি শেষে আবার নির্ধারিত গন্তব্যে ফিরে যাবেন।
বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০২৫ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাহিদা মেনে বিশেষ ট্রেন চালিয়েছে রেলওয়ে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটির ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সমাবেশগুলোয় মানুষ আনতে ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল তাদের কর্মসূচিতে লোক আনতে নির্ধারিত টাকা দিয়ে ট্রেন ভাড়া করে।
রাত সোয়া সাতটার দিকে বিএনপির কর্মসূচিতে বিশেষ ট্রেন চালুর বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি লেখেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও কোচের তীব্র সংকট রয়েছে। এতদ্সত্ত্বেও লন্ডন থেকে আগত তাদের নেতার সভায় জনসাধারণের যোগদানের সুবিধার্থে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ জানুয়ারি তাদের চাহিত ১১টি ট্রেনের মধ্যে ১০টি স্পেশাল রিজার্ভড ট্রেন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৮টি ট্রেনে ১৭টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। বিএনপি এ জন্য নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করবে।’
ফাওজুল কবির খান লেখেন, ‘এর ফলে আমাদের দুটি অপ্রধান লাইনে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যাত্রীদের এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্পেশাল ট্রেনের কারণে নিয়মিত যাত্রীদের ও কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে সুগম করার জন্য বাংলাদেশ রেলের যাত্রীসাধারণ এ সাময়িক অসুবিধা মেনে নেবেন আশা করছি।’


















