তপশিলের আগে দাবি আদায় করতে চায় বিএনপি

0
151
দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলের আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর পল্টনে, ৩ জুলাই

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করতে চায় বিএনপি।  লক্ষ্য অর্জনে আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করছে দলটি। এ ক্ষেত্রে দুই ধাপের আন্দোলনের টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে তারা।

প্রথম ধাপের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ ও গতানুগতিক। এতে সমাবেশ, রোডমার্চ ও পদযাত্রার মতো ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকবে। আজ সোমবার প্রথম ধাপের কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে দলটির। এর মধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত টানা কর্মসূচিতে সমাবেশ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে রোডমার্চ। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই থাকবে কর্মসূচি। এই আন্দোলনে নারীদের সম্পৃক্ত করতে যেমন মহিলা সমাবেশ রয়েছে, তেমনি রয়েছে কৃষক-শ্রমিক সমাবেশও।

বিএনপি সূত্র জানায়, আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকাকে কেন্দ্র করে নগরীর ভেতরে-বাইরে রয়েছে একের পর এক ধারাবাহিক সমাবেশ কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলায়ও পালন করা হবে সমাবেশ। এর মাধ্যমে ঢাকামুখী আন্দোলনকে আরও জোরদার করার টার্গেট দলটির। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপের কঠোর কর্মসূচিতে পুরো দেশে একযোগে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে। এর প্রস্তুতি হিসেবে তৃণমূল পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়ে ব্যস্ত রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে প্রথম ধাপের কর্মসূচিতে।

দলীয় সূত্র জানায়, সরকার পতনে সারাদেশে তরুণদের সংগঠিত করতে, জনমত তৈরি করতে এরই মধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দেশের উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দেশের পাঁচ বিভাগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুটি রোডমার্চ করেই এ কর্মসূচি স্থগিত করা হচ্ছে। নতুন ঘোষিত কর্মসূচিতে আগামী মঙ্গলবার ঢাকা জেলার জিঞ্জিরা অথবা কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে যথাক্রমে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, আগামী বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট পর্যন্ত  রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন। আগামী শুক্রবার ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শনিবার ঢাকা মহানগরে দুটি সামবেশ হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরায় এবং দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে যাত্রাবাড়ীতে এ সমাবেশ হবে।

একই দিন বরিশাল থেকে শুরু হয়ে ঝালকাঠি, পিরোজপুর হয়ে পটুয়াখালী পর্যন্ত রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ সেপ্টেম্বর আবারও ঢাকা মহানগরে পৃথক দুটি সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আমিনবাজর এবং দক্ষিণে নয়াবাজারে এ সমাবেশ হবে।

সূত্র জানায়, ২৬ সেপ্টেম্বর রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে খুলনা বিভাগে। তবে এখন পর্যন্ত এর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়নি। ২৭ সেপ্টেম্বর আবারও ঢাকা মহানগরে সমাবেশ করবে দলটি। এবার ঢাকা মহানগরের গাবতলীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সমাবেশ হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার হবে ঢাকায় মহিলা সমাবেশ হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর হবে দলের কৃষক দল ও শ্রমিক দলের উদ্যোগে কৃষক-শ্রমিক সামবেশ। ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় রোডমার্চ হবে।

প্রথম ধাপের শেষ কর্মসূচি আগামী ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ হবে। প্রতিটি কর্মসূচিতে দলের সিনিয়র নেতাসহ সব পর্যায়ের নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।

এসব কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী বিশেষ করে আইনজীবীদের ভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর মধ্যে আদালতে অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি রয়েছে। তাদের ওই আন্দোলনে সমমনা সব দল সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, তারা এখনও আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছেন। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নতুন কর্মসূচি আসবে। দেশকে বাঁচাতে, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে রাজপথের কর্মসূচি ছাড়া তাদের আর বিকল্প নেই। এবার সরকার যতই চেষ্টা করুক, জনগণের আন্দোলনের সামনে তারা টিকতে পারবে না। তাদের সরে যেতেই হবে।

সূত্র জানায়, সরকার পতনের আন্দোলনের প্রথম ধাপে সরকার সাড়া না দিলে দ্বিতীয় ধাপে আসবে কঠোর কর্মসূচি। সেই ধরনের প্রস্তুতি নিতে দলের প্রত্যেক স্তরের নেতাকর্মীকে দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। সরকার পতনের আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে ওই ধাপে ঘেরাও, অবস্থান– এমনকি হরতালের মতো কর্মসূচিও থাকতে পারে। প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষ হলেই ঘোষণা হবে চূড়ান্ত আন্দোলন-কর্মসূচি।

বিএনপি নেতারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই দাবি আদায় করতে চান তারা। এই লক্ষ্যে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। প্রথম ধাপের কর্মসূচিতে একদিকে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে ব্যাপক সম্পৃক্ত করার কৌশল যেমন রয়েছে, অন্যদিকে তেমনি সরকারের অবস্থান বোঝারও চেষ্টা করবেন নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মসূচির ধরনেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। সরকার কঠিন হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবেও সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। তাই এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপিরও পেছনে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। এ আন্দোলন দলের নেতাকর্মীর জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। কারণ তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিভিন্ন মামলায় আগামী এক মাসে দলের শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে সাজা দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি তপশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে পুরো দেশকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টাও শুরু করবে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এখনই ধাপে ধাপে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতা।

সূত্র জানায়, এক দফা কর্মসূচির চূড়ান্ত সময়সীমা ও রোডম্যাপ তৈরি করতে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ধারাবাহিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে কর্মসূচি নির্ধারণের পাশাপাশি দলের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য নিশ্চিত এবং রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের জেলাগুলোকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে তারা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকগুলোতে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও আন্দোলন সফল করতে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সামনের আন্দোলনে আর কোনো ভুল করার সুযোগ নেই। সমন্বিতভাবে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে হবে।

বিএনপির মতো সমমনা অন্যান্য দল ও জোটও আজ তাদের অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। যদিও অন্যান্যবারের মতো এবার যুগপৎ কর্মসূচি নির্ধারণে এসব সমমনা দল ও জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়নি। বিভিন্ন সময়ে এ বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিএনপির কর্মসূচির চাপে তা হয়ে ওঠেনি। তবে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যমে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য দল ও জোটের কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দল ও জোটের নেতারা। সে ক্ষেত্রে নিজেদের কিছু কর্মসূচি  অন্তর্ভুক্তি করার পরিকল্পনা করছেন তারা।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আন্দোলনকে সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা। নতুন কর্মসূচি নিয়ে তারা আবারও মাঠে নামছেন। এবারের আন্দোলনকে সফল করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.