তথ্য গোপনের সংস্কৃতি পরিবর্তনের আহ্বান উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদের

0
17
তথ্য অধিকার প্রাপ্তিতে নারীর অগ্রগতিবিষয়ক এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ঢাকা, ৩০ অক্টোবর

গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিবর্তন করে তথ্য প্রকাশকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেছেন, তথ্যের অধিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শারমীন এস মুরশিদ। দ্য কার্টার সেন্টার এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ‘তথ্য অধিকার প্রাপ্তিতে নারীর অগ্রগতি প্রকল্প (এডব্লিউআরটিআই)’ শিরোনামে বার্ষিক শিক্ষণ সম্মেলনের আয়োজন করে।

শারমীন এস মুরশিদ বলেন, যখন তথ্য সহজলভ্য হয় না, তখন ভুল তথ্য সহজেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তাঁদের জাতি পুনর্গঠনের জন্য আরও একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিবর্তন করে তথ্য প্রকাশকে উৎসাহিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শারমীন এস মুরশিদ আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার মানেই তথ্যের অনধিকার। একটা সরকার যত বেশি স্বৈরাচারী, তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তত কম। তাই গণতন্ত্রের জন্য লড়তে হবে। তথ্য চাইতে ভয় লাগবে, এই পরিবেশে আমরা কোনো দিন ফেরত যেতে চাই না। তথ্য অধিকার রক্ষা করতে বা উন্নত করতে গণতান্ত্রিক ও মুক্ত পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা খেয়াল রাখবেন, মেয়েরাও যেন তথ্য অধিকার ব্যবহার করে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।’

সূচনা বক্তব্যে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এডব্লিউআরটিআই প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, যখন নারীরা তথ্যের অধিকার পান, তাঁরা শুধু নিজেদের ক্ষমতায়ন করেন না; বরং তাঁদের পরিবারেও পরিবর্তন আনেন। তথ্যের অধিকার আইন এমন একটি আইন, যা নাগরিকদের সমাজে অর্থবহ অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।

কার্টার সেন্টারের চিফ অব পার্টি সুমনা সুলতানা মাহমুদ জানান, গত বছর এডব্লিউআরটিআই প্রকল্পটি ছয়টি জেলায় পরিচালিত হয়। তথ্যের অধিকার নিয়ে দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ৬৪ জন সরকারি প্রতিনিধির সংলাপ হয়। জেন্ডার ও তথ্য অধিকার বিষয়ে ১৪৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৩০ জন সরকারি কর্মকর্তা এবং ২৩ জন নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। মোট ৩৪৪টি উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন চার হাজারের বেশি নারী। ১ হাজার ৩৬৯টি তথ্য অধিকার আবেদন করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২০৫টি অর্থাৎ ৮৮ শতাংশ আবেদন করেছিলেন নারীরা।

অতিথির বক্তব্যে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন কার্যালয়ের পরিচালক এলেনা ট্যান্সি বলেন, তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ হলো ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নারীরা স্বভাবতই শক্তিশালী। তাঁদের ক্ষমতায়নকে যেসব বিষয় বাধাগ্রস্ত করে, তা দূর করা সবার দায়িত্ব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, বৈষম্য দূর করতে এবং সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে তথ্য অধিকার আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাজে এখনো স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রকাশের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের পরিচালক এস এম কামরুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রকৃত মালিক হলো জনগণ। তাই যখনই মালিকেরা তথ্য জানতে চান, তখন দেশের সেবকদের সেই তথ্য প্রকাশ করা উচিত। যদিও তথ্য অধিকার আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সম্মেলনে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খাগড়াছড়ি ও সিলেট অঞ্চল থেকে চারজন অংশীদারি নারী তথ্য পাওয়ার মাধ্যমে তাঁদের পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরেন।

খাগড়াছড়ির সুজাতা (২২) সেলাই শেখার একটি প্রশিক্ষণের খবর জেনে সেখানে অংশ নেন। এখন তিনি সফল দরজি।

সিলেটের নুরজাহান বেগমের শখ ছিল গাড়ি চালাবেন। তাঁর এলাকায় নারীরাও যে গাড়ি চালাতে পারেন, এটি অবিশ্বাস্য বিষয় ছিল। এর মধ্যেই নুরজাহান জানতে পারেন নারীদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের কথা। তিনি সেখানে অংশ নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে আজ অনেকটাই সার্থক হয়েছেন।

তথ৵ অধিকার আইন প্রয়োগে আরও উপকৃত হয়েছেন সাতক্ষীরার চম্পা দাস এবং সিলেটের সিরিয়া বেগম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.