ঢাকার ভেতরেই এক টুকরো গ্রাম, ঘুরে আসতে পারেন এখানে

0
180
শান্তির পরশ পেতে একবার শান্তি গ্রামে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন

তীব্র যানজট। উষ্ণ শহর। বাইরে বেরোলে মনমেজাজ তিরিক্ষি হওয়ার জোগাড়। কোথায় মেলে শান্তির পরশ? চলুন তবে, একবার শান্তি গ্রামে ঢুঁ মেরে আসি।

কী ভাবছেন? শহরের ভিড় পেরিয়ে, নানান রকম দায়িত্ব ফেলে রেখে গ্রামে যাওয়ার সময় কীভাবে পাবেন? নাহ, শহরের বাইরে যাওয়ার কথা বলছি না। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একেবারে শহুরে ভিড়বাট্টার মাঝেই এক রেস্তোরাঁর নাম শান্তি গ্রাম।

রেস্তোরাঁয় পাটাতনের দোলনা
রেস্তোরাঁয় পাটাতনের দোলনা

আলোয় কিংবা বর্ষণে প্রাণ ও প্রকৃতি

রেস্তোরাঁর অন্দরজুড়েই খুঁজে পাবেন গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে। একটা পাশ একেবারেই খোলামেলা। সেখানটায় ঝলমলে রোদ্দুর। ওহ, আজ তো পয়লা আষাঢ়। বৃষ্টির সময়টায় অঝোর বর্ষণও তো নেমে আসতে পারে সেখানটায়। বৃষ্টি যদি নেমেই যায় ঝুম বর্ষায় খিচুড়ি তো জম্পেশ। প্রকৃতি যখন অন্ধকার, তখন অবশ্যই অন্দরের কৃত্রিম আলোয় সময় কাটাতে হবে। তবে ঝুলন্ত ল্যাম্প শেডগুলোতেও রয়েছে বেতের সংমিশ্রণ। তাই প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারবেন যেকোনো সময়ই। ঝুলিয়ে দেওয়া গাছের লতার দোলায় মনে আসে প্রশান্তি। মাটির জলাধারেও আছে জলজ উদ্ভিদ আর খুদে মাছের দল। মেঝেতে অন্দরসজ্জার জমকালো কারুকাজ নেই। খালি পায়ে সাদামাটা মেঝেতে হেঁটেই উপভোগ করতে পারবেন আদিমতার পরশটুকু।

মাঝে মাঝেই এমন গান আড্ডা জমে উঠে শান্তি গ্রামে
মাঝে মাঝেই এমন গান আড্ডা জমে উঠে শান্তি গ্রাম

বাঁশে-কাঠে, আলপনায় এবং…

পরিবেশন পাত্রের অধিকাংশই প্রকৃতি থেকেই নেওয়া। বাটি, গ্লাস, ট্রে এমনকি স্ট্রগুলো পর্যন্ত বাঁশের তৈরি। দৃষ্টিনন্দন পানীয়ের জন্য অবশ্য রয়েছে কাচের জার। কোস্টারগুলো পাটের। বাঁশ দিয়ে গড়া টেবিল আর টুল অন্দরে এনেছে ভিন্নরূপ। ধাতব কাঠামোর ওপর কাঠের পরত বসানো টেবিল আর টুলগুলোও বেশ। মন চাইলে কাঠের পাটাতনের দোলনায় একটু দোলও খেতে পারবেন। লম্বা বেঞ্চও আছে। দরজা-জানালা আর দেয়ালের হালকা নকশার আলপনায় গ্রামের পাবেন গ্রামের ছোঁয়া। বাঁশের পাত্র সাজানো আছে এক দিকে। নকশিকাঁথায় বাংলাদেশের মানচিত্র, বাঁধানো নকশিকাঁথা আর শুকনা পাতায় সেলাইয়ের কাজে বাংলা বর্ণের উপস্থিতিতে ফুটে উঠেছে বাঙালিয়ানা। আর তাতেই অনন্য এ অন্দর। বাইরের দিকে মেঝেতে শতরঞ্জি বিছানো জায়গায় বসে খাওয়ার সুযোগও আছে।

রেস্তোরাঁ খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত
রেস্তোরাঁ খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্তছবি : সুমন ইউসুফ

শান্তি গ্রামের গল্পটা

২০২২ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে শান্তি গ্রাম। সারওয়াত সামিন আর বিস্কুটের সম্মিলিত এ প্রয়াস বেশ সাড়া ফেলেছে নগরবাসীর মধ্যে। সারওয়াত সামিন ভ্রমণপিপাসু মানুষ, লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। রিকশাচিত্রের মতো ঐতিহ্যবাহী শৈল্পিক কাজে নিবেদিতপ্রাণ বিস্কুটের ভাবনা থেকে দুই বন্ধুর এই উদ্যোগের সূচনা। পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগে প্লাস্টিক উপকরণের ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা হয়। বিশুদ্ধতার সর্বোচ্চ দিতে সচেষ্ট থাকাটাই যেন তাঁদের এক নিরন্তর সংগ্রাম। তাঁদের খাবারে ব্যবহার করা হয় হাতে তৈরি মাখন, বিশুদ্ধ ঘি। নিজেদের তত্ত্বাবধানে ভাঙানো মসলা দিয়ে শান্তি গ্রামের রান্না হয়। শুধু খাবারই নয়, ক্রেতাদের মানসম্মত সেবাটাও দিতে চান তাঁরা।

কারওয়ান বাজারের যে গলিতে মিলবে বুলেট শিঙাড়া থেকে স্প্যাগেটি

বাঙালি খাবারগুলোকে ফিউশন আঙ্গিকে শান্তি গ্রামে পরিবেশন করা হয়
বাঙালি খাবারগুলোকে ফিউশন আঙ্গিকে শান্তি গ্রামে পরিবেশন করা হয়

খাবারদাবার

সারওয়াত সামিনের মা নিজ হাতে রান্নার কাজগুলো গুছিয়ে দেন। রান্নার প্রথম ধাপ হয়ে যায় শান্তি গ্রামের কাছেই, তাঁর বাড়িতে। বাকি প্রক্রিয়া চলে শান্তি গ্রামে। বাঙালি খাবারগুলোকে ফিউশন আঙ্গিকে পরিবেশন করা হয় এখানে। আচারি খিচুড়ির সঙ্গে তন্দুরি ফ্লেভারের মুরগির সমন্বয়টা দারুণ। তাওয়া নান কিংবা লুচিও খেয়ে দেখতে পারেন। উষ্ণ কিংবা শীতল পানীয়ও নিতে পারেন। মাশরুম পিঠা, পনির পিঠা কিংবা কলিজার স্যান্ডউইচের মতো ভিন্ন ধাঁচের খাবারও মিলবে সেখানে। অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশিত হবে উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় খাবার মাষকলাইয়ের রুটিও। গত শীতে পিঠা উৎসবও হয়েছে। ছিল ২৫ রকম পিঠার আয়োজন।

শুকনা পাতায় সেলাইয়ের কাজে বাংলা বর্ণের উপস্থিতিতে ফুটে উঠেছে বাঙালিয়ানা
শুকনা পাতায় সেলাইয়ের কাজে বাংলা বর্ণের উপস্থিতিতে ফুটে উঠেছে বাঙালিয়ানা

শান্তি গ্রামে যেতে

রেস্তোরাঁ খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ। ঠিকানা: বাড়ি ৩৬, ধানমন্ডি ৯/এ, ঢাকা। রেস্তোরাঁটি ভবনটির নিচতলাতেই, যেতে হবে বুটিক হাউস ‘খুঁত’-এর ভেতর দিয়ে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.