ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার পথে যাচ্ছে চট্টগ্রামও। চলতি বছরের ছয় মাসে যেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা মাত্র তিনজন ছিল, মাত্র ১০ দিনে তা পার করেছে একশ’র ঘর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫১ জন।
চট্টগ্রামে ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭। এতদিন কেবল চট্টগ্রাম নগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও এখন উপজেলার গ্রামগঞ্জেও মিলছে ডেঙ্গু রোগী। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সংশ্নিষ্টরা।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন দপ্তর মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রামসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলার সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ ৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত তিনজন রোগীকে শনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে।
রোগীদের প্রায় অর্ধেকই চিকিৎসাধীন আছেন চমেক হাসপাতালে। হাসপাতালের তথ্য মতে, চলতি মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালের মেডিসিন তিনটি ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। তবে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আতঙ্কের কিছু নেই। কেননা যেসব রোগী আমরা শনাক্ত করেছি তারা সবাই নরমাল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মশারির ভেতরে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাধীন থাকা সবাই শঙ্কামুক্ত আছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দাবি চট্টগ্রাম নগরে যাতে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে, সে জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। তবে করপোরেশন এমন দাবি মানতে নারাজ চট্টগ্রাম নগরের বেশকিছু এলাকার বাসিন্দারা। তাদের মতে, বাস্তবে করপোরেশনের কোনো লোককেই মশা নিধনে কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়নি।
পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, কয়েকজন লোককে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেলেও মশা নিধনে ওষুধ ছিটাতে কাউকে দেখা যায়নি। এলাকার অনেক নালাসহ বেশ কিছু স্থানে ময়লা পানিসহ আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেও তা পরিষ্কার করতেও কোনো উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি।
নগরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তর মশা নিধনে নানা কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানালেও তার কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। কিন্তু মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রামসহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে দাবি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকীর।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতদিন উপজেলার গ্রামগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত না হলেও এখন অনেকের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক নয়। কেননা বর্তমানে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সবাই শঙ্কামুক্ত।