গ্রামীণ টেলিকম থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পরে এ বিষয়ে সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের মামলার কথা জানান।
দুদকের মামলায় অভিযোগ করা হয়, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট করা হয়। শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের সময় অবৈধভাবে আইনজীবী ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয়। শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়া কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। এর সূত্র ধরেই গত বছরের ২৮ জুলাই দুদক অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছরের আগস্টের কয়েক দফায় গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
মাহবুব হোসেন জানান, অনুসন্ধান পর্যায়ে বারবার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ আসে।
অবশ্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেছিলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার-সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগতভাবে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সব সিদ্ধান্ত হয়েছে বোর্ডে। নিয়ম মেনেই শ্রমিকদের অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পাঁচ পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।