ড্রোনের কারণে ডেনমার্কে বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ, কারা কেন ওড়াচ্ছে

0
20
ড্রোন ওড়ার কারণে ডেনমার্কের আলবর্গ বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, আলবর্গছবি: রয়টার্স

ডেনমার্কের বিমানবন্দরের ওপর দিয়ে ওড়ানো ড্রোনগুলো কোনো ‘পেশাদার গোষ্ঠীর’ কাজ বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছে সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এর সঙ্গে রাশিয়ার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনায় দেশটির বিমান চলাচল ব্যহত হলো।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আলবর্গ বিমানবন্দরের আকাশে সবুজ আলো দেখা যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। বিলুন্ড বিমানবন্দরও কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। আরও তিনটি ছোট বিমানবন্দর থেকেও ড্রোন উড়তে দেখা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এর আগে গত সোমবার ড্রোন ওড়ার কারণে কোপেনহেগেন বিমানবন্দরও সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।

ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েলস লুন্ড পলসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ‘হাইব্রিড অ্যাটাক পরিকল্পিত অভিযানের’ অংশ বলে মনে হচ্ছে। তবে তিনি জানান, ড্রোনগুলো স্থানীয়ভাবেই ওড়ানো হয়েছে।

‘হাইব্রিড অ্যাটাক’ হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে সামরিক ও বেসামরিক পদ্ধতির মিশ্রণ ঘটানো হয়। এর লক্ষ্য থাকে কোনো দেশের অবকাঠামো বা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করা।

এসব ড্রোন উড়োজাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে উড্ডয়ন বা অবতরণের সময়। এমন ঝুঁকি এড়াতে বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখতে বা ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়তে হয়েছে।

ঘটনার সময় আলবর্গ বিমানবন্দর থেকে অন্তত তিনটি ফ্লাইট অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল রাতের ঘটনার শিকার সব বিমানবন্দরই ডেনমার্কের মূল ইউরোপীয় ভূখণ্ড জুটল্যান্ডে অবস্থিত।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪৪ মিনিটের দিকে প্রথম উত্তরাঞ্চলীয় আলবর্গ বিমানবন্দরে ড্রোন দেখা যায়। কয়েক মিনিট পরই পুলিশ দক্ষিণের এসবার্গ, সন্ডারবর্গ ও স্ক্রাইডস্ট্রুপের ছোট বিমানবন্দরগুলোর কাছে ড্রোন ওড়ার খবর পায়।

বিলুন্ডের আকাশে ড্রোন ওড়ার কারণে আজ বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।

ভোররাত তিনটার কিছু আগে আকাশসীমা পরিষ্কার হলে উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হয়। এই ড্রোন কারা উড়িয়েছে, ডেনিশ পুলিশ এখন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

পলসেন বলেন, এই ড্রোন অনুপ্রবেশের পেছনে রাশিয়ার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই। কোপেনহেগেনে অবস্থিত রুশ দূতাবাস তাদের জড়িত থাকার ‘আজগুবি জল্পনা’ অস্বীকার করেছে।

রাশিয়ার দূতাবাস এসব ঘটনাকে ‘সাজানো উসকানি’ বলে অভিহিত করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ‘উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে’ এসব ঘটনা ব্যবহার করা হবে।

অতীতেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘হাইব্রিড অ্যাটাক’ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকটি ন্যাটো সদস্যদেশ তাদের আকাশসীমায় রুশ অনুপ্রবেশের খবর জানানোর পর থেকে ইউরোপজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ড অন্যান্য ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধ জানায়। এর আগে প্রায় ২০টি রুশ ড্রোন পোল্যান্ডে ঢুকে পড়ে এবং অন্য একটি ঘটনায় রাশিয়ার মিগ-৩১ জেট এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে। ন্যাটোর আরেক সদস্য রোমানিয়াও জানায়, একটি রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।

রাশিয়া অবশ্য এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে জোর দিয়ে বলেছে, পোল্যান্ডের ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ছিল না। রোমানিয়ার ঘটনা নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

জার্মানি ও সুইডেনের আকাশেও সন্দেহজনক ড্রোন দেখা গেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এগুলো ইউক্রেনকে সমর্থনকারী ন্যাটো দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার পরোক্ষ হুমকির অংশ। তবে এমন সন্দেহ এখনো প্রমাণিত নয়।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বলেন, কোপেনহেগেনে ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনায় রাশিয়ার জড়িত থাকার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি এটিকে ‘ডেনমার্কের অবকাঠামোতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর হামলা’ বলে বর্ণনা করেছেন। এমন ঘটনায় নরওয়ের অসলো বিমানবন্দরও সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন।

ডেনমার্কের কর্মকর্তারা জানান, গতকালের ঘটনায় সশস্ত্র বাহিনীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, আলবর্গ বিমানবন্দরটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। স্ক্রাইডস্ট্রুপেও একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে।

ডেনিশ কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ড্রোনগুলো গুলি করে নামানো হয়নি। কর্মকর্তারা বলেন, আশপাশের জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রধান পরিদর্শক জেসপার বোগার্ড ম্যাডসেন বলেন, ‘আমরা সুযোগ পেলে ড্রোনগুলোকে নামিয়ে আনব।’

পুলিশ জানিয়েছে, ড্রোনগুলো বিমানবন্দরের মানুষ বা আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য কোনো বিপদ তৈরি করেছে বলে তারা মনে করে না। তবে তারা জনসাধারণকে ওই এলাকা থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী পলসেন উল্লেখ করেন, আগামী শুক্রবার ইইউর বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে ইউরোপজুড়ে ড্রোনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এর আগে চলতি মাসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন রাশিয়ার অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় একটি ‘ড্রোন প্রাচীর’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এর অর্থ ঠিক কী, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে কৌশলটির মূল ভিত্তি হলো দ্রুত ড্রোন শনাক্ত করে ধ্বংস করা।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.