ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে, অনেকে ঢাকার বাইরের

0
122
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালটির পুরুষ ওয়ার্ডে ১৪টি বিছানার প্রতিটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। নারী ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন অনেক রোগী।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীরা ভর্তি রয়েছেন।

হাসপাতালের ছয়তলায় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। গত মাসের ১৩ তারিখে এসব ওয়ার্ড চালু করা হলেও পাঁচ–ছয় দিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু দুজনের, নতুন রোগী পাঁচ শতাধিক

গত মঙ্গলবার এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার বাসিন্দা তারেক রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

তারেক রহমান বলেন, নিজ বাড়িতে তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। জ্বর না কমায় ঢাকায় এসে পরীক্ষা করান। পরে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে তারেক রহমানের পাশের বিছানায় মঙ্গলবার থেকে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গভর্নমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায়।

রুবেল মিয়া  বলেন, এলাকায় চার দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সেখানে পরীক্ষা করার পর তাঁর ডেঙ্গু ধরা পরে। চিকিৎসকের পরামর্শে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে জানিয়ে রুবেল মিয়া আরও বলেন, জ্বরের পাশাপাশি তাঁর প্রচণ্ড পেটব্যথা এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল। এখনো তাঁর শরীরে জ্বর রয়েছে। একটি কম্বল গায়ে দিয়ে রুবেল মিয়াকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

একই ওয়ার্ডে রুবেল মিয়ার পাশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা মনির উদ্দিন। পেশায় কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, এলাকায় সাত দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি গতকাল বুধবার এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত দুজন নার্স  বলেন, পাঁচ-ছয় দিন ধরে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে একটা বিছানাও খালি নেই। রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। যাঁদের এই ওয়ার্ডে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হচ্ছে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ৬ তলায় ডেঙ্গু রোগীদের পুরুষ ওয়ার্ডের পাশেই নারী ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারী ওয়ার্ডে আটটি বিছানার ব্যবস্থা করেছে। ওয়ার্ডের একজন নার্স বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের চারজন রোগী ঢাকার বাসিন্দা। একজন টাঙ্গাইল থেকে এসেছেন।

এই দুই ওয়ার্ডে যাঁদের ভর্তি করানো যাচ্ছে না, তাঁদের একই তলায় মেডিসিন ইউনিট ৫–এ ভর্তি করানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইউনিটে সাতজন ভর্তি হয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সেখানে কথা হয় যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মো. লিটনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত শনিবার থেকে তিনি প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত। কোনোভাবেই জ্বর কমছিল না। পরীক্ষা করানোর পর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। গতকাল হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন।

হাসপাতালটি ঘুরে সরেজমিনে আরও দেখা যায়, দু-একজন বাদে সবাই মশারির ভেতরে অবস্থান করছেন।‌

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে তাঁরা ২ জন ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছেন। যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ইনডোর এবং আউটডোরে চিকিৎসা–সেবা ও পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেখেছে বলে এই চিকিৎসক জানান। জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের অনেকেই ডায়রিয়া ও পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৮৪ জন, মারা গেছেন ১ জন। দেশে কোনো বছরের জুলাই মাসের শুরুতেই ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.