ডেঙ্গু রোগীর কখন প্লাটিলেট লাগে

0
193
হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

রক্তে তিন ধরনের উপাদান বা কোষ আছে। লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা। ডেঙ্গু রুগীর প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে, তখন রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গে (মস্তিষ্ক, চোখ, পেট ইত্যাদি) অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ থেকে রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে তাই স্বভাবতই প্লাটিলেট পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। প্লাটিলেট সাধারণত নেমে গিয়ে আবার বাড়তে শুরু করে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসা লাগে না। তবে কখনো কখনো, যদি চিকিৎসক মনে করেন তবে কারও দান করা রক্ত থেকে অণুচক্রিকা আলাদা করে রোগীর শরীরে দিতে পারেন।

রক্ত থেকে দুইভাবে অণুচক্রিকা আলাদা করা যায়। একটা পদ্ধতি হলো র‍্যানডম ডোনার প্লাটিলেট (আরডিপি)। এতে ৪-৬ জন রক্তদাতার কাছ থেকে রক্ত নিয়ে মেশিনের মাধ্যমে অণুচক্রিকাকে আলাদা করা হয়।

অপর পদ্ধতিতে আফারেসিস মেশিনের মাধ্যমে রক্তদাতার কাছ থেকে অণুচক্রিকা আলাদা করে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় রক্তদাতার শরীর থেকে সম্পূর্ণ রক্ত নিয়ে আফারেসিস মেশিনে প্লাটিলেট আলাদা করা হয়। রক্তের বাকি উপাদান যেমন লোহিত রক্তকণিকা, প্লাজমা পুনরায় রক্তদাতার শরীরে ফেরত দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৪৫-৯০ মিনিট লাগে।

আফারেসিস প্রক্রিয়াই ভালো। এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট দিলে প্লাটিলেটের সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রোগীর রক্ত গ্রহণের প্রতিক্রিয়া কম হয়, সংক্রমণের ঝুঁকিও কম থাকে। তবে মুশকিল হলো, এর খরচ বেশি। আফারেসিস মেশিনের পাশাপাশি দক্ষ প্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন পড়ে।

আফারেসিস রক্তদাতার যোগ্যতা

একজন সুস্থ মানুষ যে রক্ত দিতে পারবেন, তিনি প্লাটিলেটও দিতে পারবে। প্লাটিলেট দান করার জন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। দাতার প্লাটিলেট ভালো থাকতে হবে। ওজন ঠিক থাকতে হবে, উচ্চতা ভালো থাকতে হবে, রক্তদাতার শিরা স্পষ্ট ও দৃশ্যমান হতে হবে, সাত দিনের মধ্যে ব্যথার ওষুধ সেবনকারী প্লাটিলেট দিতে পারবেন না।

আফারেসিস প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট দিলে রক্তদাতা ১৪ দিন পর আবার প্লাটিলেট দিতে পারবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ রক্ত দান করলে চার মাস পর আবার রক্ত দান করতে পারবেন।

আফারেসিস প্রক্রিয়ায় যে প্লাটিলেট পাওয়া যায়, তার এক ইউনিট রোগীর শরীরে দিলে ৩০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত প্লাটিলেট বৃদ্ধি পায়।

ঢাকার সরকারি হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আফারেসিস প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট আলাদা করা যায়। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও এই সুবিধা আছে। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রামে এই সুবিধা আছে।

লেখক: জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন অ্যান্ড আফারেসিস সেন্টার, ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেড, ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.