ডেঙ্গুতে ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুহার বেশি

0
205
বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২০০ জন ডেঙ্গু রোগীর ১ জন মারা যাচ্ছেন। তবে কয়েকটি হাসপাতালে মৃত্যুর হার বেশি। বেশি মৃত্যু হতে দেখা যাচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেশের শীর্ষ এই হাসপাতালে ১০০ জন রোগী ভর্তি হলে প্রায় ২ জনের মৃত্যু হচ্ছে।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর এই তথ্য পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের প্রতিদিনের পাঠানো প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে। গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে ১ হাজার ৯৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময় সারা দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো ৪২৬ জনের। আর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৮৭৫ জন।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা ভালো হয়, ঢাকা মেডিকেলে রোগী এলে ফেরত যায় না—এসব কারণে সারা দেশের রোগী এখানে আসেন, আসছেন। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ডেঙ্গু রোগীরা খুব খারাপ অবস্থায় এখানে আসছেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আমরা সময় বেশি পাচ্ছি না, মৃত্যু হচ্ছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক, পরিচালক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৮ জন। অর্থাৎ ১০০ জন রোগীর মধ্যে ১ দশমিক ৯ জন বা প্রায় ২ জন মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর এই হার অনেক বেশি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে সাধারণ ও ডেঙ্গু রোগীর চাপ অনেক বেশি। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা ভালো হয়, ঢাকা মেডিকেলে রোগী এলে ফেরত যায় না—এসব কারণে সারা দেশের রোগী এখানে আসেন, আসছেন। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ডেঙ্গু রোগীরা খুব খারাপ অবস্থায় এখানে আসছেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আমরা সময় বেশি পাচ্ছি না, মৃত্যু হচ্ছে।’

ঢাকা মেডিকেলের পর মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৮৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৪ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৭।

এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ৭ হাজার ৫৮২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮১ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬।

এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ৭ হাজার ৫৮২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮১ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬।

বয়স্ক ব্যক্তিদের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে শিশুদের মৃত্যুও অনেক। ১৮ বছরের কম বয়সী ৮১ জন শিশু ইতিমধ্যে মারা গেছে। এই মৃত্যু বিভিন্ন হাসপাতালে হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুহার কম নয়। শিশুরোগ চিকিৎসার বিশেষায়িত এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৭৭৭টি শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে ১২টি শিশু। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গুতে দেশে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ওই তিনটি সরকারি হাসপাতাল এবং শিশু হাসপাতালে মৃত্যুহার জাতীয় হারের চেয়ে বেশি। অধিদপ্তরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালেও মৃত্যুহার বেশি দেখা যাচ্ছে। যেমন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৭৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬। স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪১ জন, মারা গেছেন ৯ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৭।

ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪২৬ জনের মধ্যে ঢাকা শহরের বাইরে মারা গেছেন ১০৩ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.