ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা। প্যানেলগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় এখন ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হচ্ছে।
তবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচার–প্রচারণা এখনো শুরু হয়নি। ২৬ আগস্ট বিকেল চারটায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২৫ আগস্টের মধ্যে। ভোটের দিনের (৯ সেপ্টেম্বর) ২৪ ঘণ্টা আগপর্যন্ত প্রচার করা যাবে।
গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন প্যানেলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষে বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮ পদে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। যদিও বিভিন্ন পদের জন্য শিক্ষার্থীরা ৬৫৮টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সেই হিসাবে ১৪৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি।
তাঁরা জানালেন, অনেক প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে মূলত পাঁচটি প্যানেলের মধ্যে। এগুলো হলো ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, প্রতিরোধ পর্ষদ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য এবং ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। কারণ, এসব প্যানেলের কমবেশি নিজস্ব ভোট রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আন্দোলন–সংগ্রামের অনেক পরিচিত মুখ এসব প্যানেলে রয়েছেন।
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৮টি হল সংসদে ২৩৪টি পদের জন্য ১ হাজার ৪২৭টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ১০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বাকি ৩১৮টি জমা পড়েনি।
গতকাল প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ (গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ) এবং অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ (বামপন্থী তিন সংগঠনের যৌথ প্যানেল)। এর আগে প্যানেল ঘোষণা করেছিল প্রতিরোধ পর্ষদ (বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল), ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট (ইসলামী ছাত্রশিবির), ডিইউ ফার্স্ট (মাহিন সরকার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেল), ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ (ছাত্র অধিকার পরিষদ), ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য (স্বতন্ত্র প্যানেল)।
প্যানেল ছাড়াও অনেকে ডাকসুর বিভিন্ন পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তাঁদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হওয়া জুলিয়াস সিজার তালুকদারকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা আছে। কারণ, তিনি একসময় ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) নেতা ছিলেন। বিভিন্ন পক্ষ তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দাবি তুললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর প্রার্থিতা বহাল রেখেছে।
এ ছাড়া ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সানজিদা আহমেদ তন্বীকে সমর্থন জানিয়ে নিজেদের প্যানেলে এই পদে প্রার্থী রাখেনি ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, বামপন্থী তিন সংগঠন, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আহত হয়েছিলেন সানজিদা। তাঁর রক্তাক্ত ছবি অভ্যুত্থানের অন্যতম আইকনিক ছবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
গতকাল ক্যাম্পাসে গিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মী এবং বিভিন্ন বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানালেন, অনেক প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে মূলত পাঁচটি প্যানেলের মধ্যে। এগুলো হলো ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, প্রতিরোধ পর্ষদ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য এবং ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। কারণ, এসব প্যানেলের কমবেশি নিজস্ব ভোট রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আন্দোলন–সংগ্রামের অনেক পরিচিত মুখ এসব প্যানেলে রয়েছেন।
পাঁচ প্যানেলে যাঁরা প্রার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্যানেল ঘোষণার পর গতকাল দুপুরে সিনেট ভবনে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা। ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি পদে প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। তিনি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে শেখ তানভীর বারী হামিম ও এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে তানভীর আল হাদী মায়েদকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল। হামিম ছাত্রদলের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার আহ্বায়ক আর তানভীর বিজয় একাত্তর হল শাখার আহ্বায়ক।
বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা প্যানেল ঘোষণা করেন। এই প্যানেলে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরকে ভিপি ও আরেক সমন্বয়ক মো. আবু বাকের মজুমদারকে জিএস প্রার্থী করা হয়েছে। কাদের গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আর বাকের কেন্দ্রীয় আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। এই প্যানেল থেকে এজিএস পদে লড়বেন আশরেফা খাতুন। তিনি ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র।
বৈষম্যবিরোধীদের পর গতকাল সিনেট ভবনে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্রার্থীরা। এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। জিএস পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খান মাহমুদুল হাসান, আল সাদী ভূঁইয়া ও মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। সাদী ও মাহি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নেতা। সাদী সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি আর মাহি বর্তমান সভাপতি। এই প্যানেল থেকে এজিএস পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাহেদ আহমেদ। তবে গতকাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্যানেল ঘোষণা করা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার তারা প্যানেল ঘোষণা করতে পারে।
ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি পদে প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। তিনি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে শেখ তানভীর বারী হামিম ও এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে তানভীর আল হাদী মায়েদকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল। হামিম ছাত্রদলের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার আহ্বায়ক আর তানভীর বিজয় একাত্তর হল শাখার আহ্বায়ক।
বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠনের সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদে ভিপি পদে প্রার্থী করেছে শেখ তাসনিম আফরোজকে। তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়ে শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু। আর এজিএস পদে প্রার্থী করা হয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেলকে।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। জিএস পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খান মাহমুদুল হাসান, আল সাদী ভূঁইয়া ও মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি।
শিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদকে প্রার্থী করা হয়েছে। এজিএস পদে শিবিরের প্রার্থী সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরকে ভিপি ও আরেক সমন্বয়ক মো. আবু বাকের মজুমদারকে জিএস প্রার্থী করা হয়েছে।
আলোচনার কেন্দ্রে ডাকসু নির্বাচন
আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের আড্ডাস্থলগুলোতে এখন আলোচনার প্রধান বিষয় ডাকসু নির্বাচন। বিভিন্ন আলোচনায় প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। জুলাই অভ্যুত্থানে প্রার্থীদের ভূমিকার বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হল ঘুরে ১২ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগ শাসনামলের মতো গণরুম-গেস্টরুমের সংস্কৃতিতে আর ফিরতে চান না। তাঁরা ছাত্র সংসদে এমন নেতৃত্ব চান, যাঁরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকট নিয়ে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কিছুটা এগিয়ে রাখছেন শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক প্যানেলগুলোর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীরাও থাকছেন শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায়।
বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠনের সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদে ভিপি পদে প্রার্থী করেছে শেখ তাসনিম আফরোজকে। তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়ে শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু।
হলগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেল, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু না হলেও হলের দোকান, পাঠকক্ষ ও ক্যানটিনে গিয়ে প্রার্থীদের অনেকে নিজেদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সমর্থন চাইছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এস এম রাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার একক প্যানেল কোনোটিই জিতবে না। ব্যক্তি ইমেজ, কাজের দক্ষতা দেখেই ভোট দেব। কোনো প্রার্থী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা সেটি গ্রহণ করবেন না। আবাসিক হলে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি আর ফিরবে না, এমন প্রতিশ্রুতি যাঁরা দেবেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদেরকেই বেছে নেবেন।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগ শাসনামলের মতো গণরুম-গেস্টরুমের সংস্কৃতিতে আর ফিরতে চান না। তাঁরা ছাত্র সংসদে এমন নেতৃত্ব চান, যাঁরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকট নিয়ে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কিছুটা এগিয়ে রাখছেন শিক্ষার্থীরা।
সর্বজনীনতায় গুরুত্ব
বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবাই নিজেদের প্যানেলকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ দেখাতে চেয়েছে। সে জন্য প্রায় সবাই নিজেদের প্যানেলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী এবং নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে।
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলেছেন, যেহেতু নারী ভোটার (৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ) অনেক বেশি এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক শিক্ষার্থীও ভোটার, তাই তাঁরা নিজেদের প্যানেলকে যথাসম্ভব সর্বজনীন করতে চেয়েছেন।
শিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদকে প্রার্থী করা হয়েছে।
যেমন ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্রশিবির তাদের প্যানেলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন শিক্ষার্থীকে (সর্ব মিত্র চাকমা) সদস্য পদে প্রার্থী করেছে। এ ছাড়া চারজন ছাত্রী (ফাতেমা তাসনিম জুমা, উম্মে সালমা, সাবিকুন নাহার তামান্না ও আফসানা আক্তার) তাদের প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন। শিবিরের প্যানেলে আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রার্থী করা হয়েছে খান জসিমকে, তিনি জুলাই আন্দোলনে এক চোখ হারিয়েছেন। এ প্যানেল থেকে সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে একজন রাইসুল ইসলাম, তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
ছাত্রদলের প্যানেলে ক্রীড়া সম্পাদক পদে চিম চিম্যা চাকমা নামের এক শিক্ষার্থীকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী করা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ পালকে। চেমন ফারিয়া ইসলাম ও মেহেরুন্নেসা কেয়া নামে দুজন ছাত্রীকেও প্রার্থী করেছে তারা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ইবনু আহমেদও জায়গা পেয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলে।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচ ছাত্রী। তাঁরা হলেন মিতু আক্তার, আনিকা তাহসিনা, তাপসী রাবেয়া, রওনক জাহান ও মাহফুজা নওয়ার নওরীন।
প্রতিরোধ পর্ষদে ভিপিসহ ১১ জন প্রার্থীই নারী। আর ৩ জন আছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের কেউ কেউ অনেকটা মিছিলের মতো করে বা দল বেঁধে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। বিভিন্ন প্যানেলের অনেক প্রার্থীই পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে যান।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালায় উল্লেখ আছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না।
গতকাল বিকেলে প্যানেল ঘোষণার সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী অনেক সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটিকে প্রশাসনের ‘পক্ষপাত’ আখ্যায়িত করেন বাকের।
ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দিনের ব্রিফিংয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ এসেছে, তার ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে। প্রার্থীরা সেটি মেনে নিয়েছেন।
একই পদে একাধিক প্রার্থী
সাবেক সমন্বয়কদের গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ এজিএস পদে আশরেফা খাতুনকে প্রার্থী করেছে। কিন্তু একই পদে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী। শুধু তাহমিদই নন, ছাত্রসংসদের আরও বেশ কয়েকজন নেতা ডাকসুর বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কেউ কেউ সংগঠন থেকে পদত্যাগও করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হয়েছে হাসিবুল ইসলামকে। এই পদে নির্বাচন করছেন ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব আবু সাঈদ।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে পদত্যাগ করে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মুক্তসেন মোক্তার, একইভাবে মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন আজিজুল হক।
তাঁরা ছাড়াও ছাত্রসংসদের আরও কয়েকজন নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী কৌশলের জায়গা থেকে ছাত্রসংসদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
মেহেদী হাসান ও আসিফ হাওলাদার, ঢাকা