ডলারের তেজ কি শেষ পর্যন্ত কমে আসছে

0
146
মার্কিন ডলার

চলতি মাসে মার্কিন ডলারের পতনের গতি আরও খানিকটা বেড়েছে। কারণ হলো, বিনিয়োগকারীরা সুদের হারের বিষয়ে তাদের প্রত্যাশা কমিয়েছে।

সিএনএন জানায়, গত সেপ্টেম্বরে ডলারের দাম দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। এর পেছনে মূল কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ। কিন্তু এরপর এল মন্দার আশঙ্কা, তিনটি আঞ্চলিক ব্যাংকের পতন এবং কংগ্রেস সদস্যদের বাক্‌যুদ্ধ ও সরকারের ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ।

তবে এখন যখন মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী, ফেডারেল রিজার্ভ তখন সুদের হার বাড়ানোর ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইউএস ডলার ইনডেক্স গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে। ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, সুইস ফ্রাঁ, জাপানের ইয়েন, কানাডিয়ান ডলার ও সুইডেনের ক্রোনার বিপরীতে ডলার ইনডেক্স ঠিক করা হয়।

গত বুধবার ফেড তার নীতি সুদের হার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে। এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে যে এই বছরের আরও পরের দিকে আরও একবার সুদের হার বাড়ানো হবে। কিন্তু এমনও হতে পারে যে সুদের হার হয়তো আর বাড়ানো হবে না, বরং ফেড সুদের বর্তমান হার বজায় রেখেই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনা সুদের হার বাড়ানোর যে ধারা মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরু করেছিল, তার সম্ভবত সমাপ্তি ঘটছে। ফেডারেল রিজার্ভকে অনুসরণ করে বিশ্বের বহু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সুদের হার বাড়িয়ে চলছিল। এখন অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ডলার শেষ পর্যন্ত হয়তো একটি টেকসই স্তরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি চার্লস শোয়াবের স্থায়ী আয়বিষয়ক চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্যাথি জোনস বলেন, ‘শহরের একমাত্র আকর্ষণ হিসেবে ডলার তার চাকচিক্য খানিকটা হারিয়েছে।’

কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ

ডলারের দাম কমে যাওয়া অবশ্য কিছু মার্কিন কোম্পানির জন্য শাপেবর হতে পারে। এর ফলে এসব কোম্পানির আয় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বিদেশ থেকেই বেশির ভাগ আয় আসে এমন বেশ কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি গত বছর শক্তিশালী ডলারের কারণে সমস্যায় ছিল। এসব কোম্পানির মধ্যে ছিল সেলসফোর্স, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল।

তা সত্ত্বেও এ বছর শেয়ারবাজার চাঙা ছিল প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কল্যাণে। ডলার দুর্বল হলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আয় আরও বাড়বে। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়বে এবং শেয়ারবাজারের চাঙাভাব বজায় থাকবে। তবে ক্যাথি জোনস মনে করেন, দুর্বল ডলারের কারণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়লেও এই সুবিধা হবে সাময়িক।

অন্যদিকে প্রিন্সিপাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চিফ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট সীমা শাহ বলেন, ডলারে দাম খুব বেশি কমার সুযোগ নেই।

জাপান শুক্রবারে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ক্রমান্বয়ে সুদের হার বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে। তারপর ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার সুদের হার আরও এক দফা বাড়িয়ে জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় তাদের পরবর্তী বৈঠকে তারা সুদের হার বাড়ানো স্থগিত রাখতে পারে।

সীমা শাহ বলেন, এমনটা ঘটার সম্ভাবনা কম যে অন্যরা যখন সুদের হার বাড়াচ্ছে, তখন ফেড সুদের হার কমাচ্ছে। এমন সম্ভাবনা সত্যিই খুব কম।

ডলারের দাম কমলে সোনা বেচাকেনায় তা প্রভাব রাখবে। চলতি বছরে সোনার দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। এর মূল কারণ ট্রেজারি বিল থেকে আয় কমেছে, আর ডলারের দামও কমেছে। সোনার দাম নির্ধারিত হয় ডলারে। সুতরাং ডলারের দাম যখন কমে তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বিনিয়োগকারীরা কম দামে সোনা কিনতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.