ট্রাকে আবারও প্রাণহানি, প্রতিবাদ

0
165
সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ ও ট্রাকচাপায় নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল পাবনার বেড়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা নৌঘাট–সংলগ্ন সড়কে

গত রোববার বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার সড়কে বালুবাহী ট্রাকের চাপায় নান্নু প্রামাণিক (৪৮) নামের এক ঠিকাদার নিহত হন।

পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে বালুবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকের বেশির ভাগ চালকই অদক্ষ এবং তাঁদের বৈধ লাইসেন্স নেই। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দিনে ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সর্বশেষ গত রোববার বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার সড়কে বালুবাহী ট্রাকের চাপায় নান্নু প্রামাণিক (৪৮) নামের এক ঠিকাদার নিহত হন। এর প্রতিবাদে গতকাল সোমবার এলাকার লোকজন মানববন্ধন করেন। সকাল ১০টায় বৃশালিখা নৌঘাট–সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন শুরু হয়। বক্তারা পৌর এলাকায় দিনে ট্রাক চলাচল বন্ধ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্পিডব্রেকার স্থাপন, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন ট্রাক ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সড়কে নিরাপদ চলাচলের দাবি জানান। মানববন্ধন শেষে এসব দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর দেওয়া হয়।

এলাকাবাসী জানান, বেপরোয়া গতির বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবিতে উপজেলায় বারবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন কয়েক দিনের জন্য দিনের বেলা ট্রাক চলাচল থাকে। পরে আবারও ট্রাক চলাচল শুরু হয়। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন শতাধিক বালুবাহী ট্রাক চলাচল করে। ট্রিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকে বলে এসব ট্রাক চলে বেপরোয়া গতিতে। ট্রাকের শ্রমিকেরাও মারমুখী আচরণ করে থাকেন।

আগেও আমরা ট্রাকচাপায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু তাতে বন্ধ হয়নি ট্রাক চলাচল।

মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক, বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি

২০২১ সালে ৩০ মার্চ দুপুরে বেড়া পৌর এলাকার শাহপাড়া মহল্লায় একটি বালুবাহী ট্রাকের চাপায় নিহত হন আছিয়া খাতুন (৮০) নামের এক নারী। এর প্রতিবাদে ও বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবিতে ওই বছরের ১ এপ্রিল এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌর এলাকায় দিনে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয় বালুবাহী ট্রাকের চলাচল।

তবে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছিল ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বেড়া পৌর শহরে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ফাহিম মোন্তাহিন নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র বালুবাহী ট্রাকচাপায় নিহত হয়।

এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বেড়া পৌরবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং অবাধে ট্রাক চলাচল বন্ধসহ আট দফা দাবিতে তখন কয়েক দিন ধরে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। আন্দোলনের মুখে ওই সময় কয়েক দিনের জন্য দিনে ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়েছিল।

বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময়ও ট্রাকগুলো বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগেও আমরা ট্রাকচাপায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু তাতে বন্ধ হয়নি ট্রাক চলাচল। দিনের বেলা ট্রাক চলাচল বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই।’

বেড়ার ইউএনও সবুর আলী বলেন, ‘মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে স্মারকলিপি পেয়েছি। তবে এর আগেই আমরা দিনের বেলা ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখাসহ নিরাপদ সড়কের জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্পিডব্রেকার স্থাপন করা হবে, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন ট্রাক ও চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.