
বারবার আউট হতে হতেও বেঁচে যাচ্ছিলেন হ্যারি ব্রুক। পরশু ইংল্যান্ড-ভারত হেডিংলি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ ওভারে শূন্য রানে ব্রুককে আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। কিন্তু বুমরার বলটি নো হওয়ায় সেই দফায় টিকে যান ইংল্যান্ডের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
কাল রোববার তৃতীয় দিনে আরও দুবার জীবন পান ব্রুক। একবার ৪৬ রানে থাকতে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ক্যাচ ছাড়েন ভারতের উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত, আরেকবার ৮২ রানে থাকতে বুমরার বলে গালিতে ক্যাচ ফেলেন যশস্বী জয়সোয়াল।
এতবার টিকে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি থেকে ব্রুককে বোধ হয় আর আটকানো যাবে না। কিন্তু ৯৯ রানে থাকতে প্রসিধ কৃষ্ণার বলে পুল করতে গিয়ে লং লেগে শার্দূল ঠাকুরের হাতে ধরা পড়েন ব্রুক। অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে হতাশায় মুখ ঢাকার পর ব্যাটটাকে শূন্যে ছোড়েন। এরপর ১ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এর মধ্য দিয়ে টেস্ট ইতিহাসের ৮০তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯৯ রানে আউট হয়েছেন ব্রুক। সব মিলিয়ে টেস্টে সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে থেকে আউট হওয়ার ৮৯তম ঘটনা এটি।
৯ জন ব্যাটসম্যান দুবার করে ৯৯ রানে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন—ইংল্যান্ডের মাইক স্মিথ ও মাইক আথারটন, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ ব্লেওয়েট ও সাইমন ক্যাটিচ, পাকিস্তানের সেলিম মালিক ও মিসবাহ-উল-হক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিচি রিচার্ডসন ও নিউজিল্যান্ডের জন রাইট।
টেস্ট খেলুড়ে ১২ দলের মধ্যে ৯টিরই কোনো না কোনো ব্যাটসম্যান ৯৯ রানে আউট হয়েছেন। তবে কমপক্ষে ১০০ টেস্ট খেলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ।
পরশু শেষ হওয়া গল টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছরে এই সংস্করণে খেলেছে ১৫৩ টেস্ট; ব্যাটিং করেছেন ১০৭ জন। তবে কোনো ব্যাটসম্যান ৯৯ রানে আউট হননি। ‘নড়বড়ে নব্বইয়ের’ ফাঁড়া কাটিয়ে বাংলাদেশের ২৭ ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন ৮৭ বার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনা মাত্র একটি। আবুধাবিতে ২০১৮ এশিয়া কাপে (ওয়ানডে সংস্করণ) পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে থাকতে শাহিন আফ্রিদির বলে উইকেটের পেছনে সরফরাজ আহমেদকে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম।

টেস্টের নবীন দুই দল আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড এখন পর্যন্ত যথাক্রমে ১১টি ও ১০টি ম্যাচ খেলেছে। দল দুটির কোনো ব্যাটসম্যান এখনো ৯৯ রানে আউট হননি।
টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরির সবচেয়ে কাছে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৪ সালে হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৮ রানে আউট হন তিনি।
টেস্টে প্রথমবার ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনা ১৯০২ সালে। সেই বছর মেলবোর্ন টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন অস্ট্রেলিয়ার ক্লেম হিল।

এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বশেষ ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন ভারতের ঋষভ পন্ত, গত বছরের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টে। সেই পন্ত কাল মাঠে দাঁড়িয়েই ব্রুকের যন্ত্রণায় পোড়ার সাক্ষী হয়েছেন।
বাংলাদেশের মাটিতেও এমন ঘটনা একবার ঘটেছে। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের সাবেক স্পিনার ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক আবদুর রাজ্জাকের বলে ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেন ৯৯ রানে থাকতে বোল্ড হন।
একই টেস্টে তিন ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার বিস্ময়কর ঘটনাও আছে। ১৯৭৩ সালে করাচি টেস্টে সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে থাকতে মাঠ ছাড়তে হয় পাকিস্তানের মজিদ খান ও মুশতাক মোহাম্মদ এবং ইংল্যান্ডের ডেনিস অ্যামিসকে।
সাহিদ রহমান
ঢাকা