জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘মানবতার সাফল্য পরিলক্ষিত হয় সবার সম্মিলিত শক্তিতে, যুদ্ধক্ষেত্রে নয়।’ ওই ভাষণের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও মোদি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিলেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে তিনি বলেন, যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি স্থাপনে ভারত সাধ্যমতো চেষ্টা করবে।
গত সোমবার ওই বৈঠকের পর দুই দেশের তরফ থেকে এক যৌথ বিবৃতি প্রচার করা হয়। তাতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতিসংঘের সনদের নীতি রক্ষায় দুই দেশ সহযোগিতায় প্রস্তুত। সেই লক্ষ্যে দুই দেশ আরও নিবিড় আলোচনায় আগ্রহী।
বৈঠকের পর জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারত স্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞ।
সম্পর্ক গভীরতর করে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারে তাঁরা সক্রিয় জানিয়ে বৈঠকের পর জেলেনস্কি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘জাতিসংঘ ও জি-২০–এর মতো আন্তর্জাতিক আসরে আলোচনার পরিধি বিস্তার ও শান্তি ফর্মুলার রূপায়ণই ছিল এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়। আমাদের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় স্পষ্ট সমর্থনের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
প্রধানমন্ত্রী মোদিও বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতের দ্রুত নিষ্পত্তি ঘটিয়ে শান্তি ও সুস্থিতি স্থাপনে ভারতের সমর্থনের কথা আরও একবার জানিয়ে দেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধে মোদি তাঁর মতো করে সচেষ্ট। দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বহুকালের। ইউক্রেনও মিত্রদেশ। স্বাভাবিক কারণেই ভারত চায় সংঘাতের এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটুক।
এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের এক সমাবেশে সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে বিশ্বরাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে। এখন ভারত কিছু বললে গোটা পৃথিবী তা শোনে।’
এই প্রসঙ্গে মোদি বলেন, ‘যখন আমি বলেছিলাম এটা যুদ্ধের সময় নয়, সহযোগিতার, তখন সবাই সেই কথার গুরুত্ব অনুধাবন করেছিল। পৃথিবীর কোথাও কোনো রকম সংকটের নিরসনে ভারত প্রথম সাড়া দেয়।’ ভারত কী চায়, তার নীতি ও দর্শন কী তা ব্যাখ্যা করে মোদি বলেছিলেন, ‘চাপ বৃদ্ধি ভারতের উদ্দেশ্য বা অগ্রাধিকার নয়। ভারত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের উন্নতিতে ভারত সহযোগিতার হাত বাড়াতে চায়।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পার হয়েছে। কোয়াড সম্মেলনেও সেই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও আশু নিরসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এরপর মোদি-জেলেনস্কির বৈঠক হয়।