জুলাইতে ৩৫৭ অস্বাভাবিক মৃত্যুর বেশিরভাগই কোটা আন্দোলনে: এমএসএফ

0
60

গত জুলাই মাসে সারা দেশে ৩৫৭টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেই মারা গেছেন ২১১ জন। অবশ্য আন্দোলনকারীদের তরফে দাবি কোটা সংস্কার আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা ২৬৬। বুধবার এমএসএফ জুন ও জুলাই মাসের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়, জুন মাসে দেশে ১৬৮ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৬টি মৃত্যু ছিল হত্যাকাণ্ডজনিত। ৬১টি ছিল আত্মহত্যা। কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল সাত জনের। নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় মারা গেছেন ৭ জন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দুজনসহ বিভিন্নভাবে এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

অথচ জুলাই মাসে কেবল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেই মারা গেছেন ২১১ জন। মামলা হয়েছে ৭৯৮টি। আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার মানুষকে। গ্রেপ্তার হয়েছে ১০ হাজার ৩৭২ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ৭৩০ জন। আর বিভিন্ন ঘটনায় হত্যা করা হয়েছে ৬৭ জনকে। আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৫২টি। সীমান্তে মারা গেছেন ছয়জন।

প্রতিবেদনের বেশিরভাগ অংশেই জুলাই মাসের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মতামত স্থান পেয়েছে। বলা হয়েছে, জুলাই মাসের প্রথম থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কিছু দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার ফলে ১৫ জুলাই বিকেল থেকে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে প্রকাশ্যে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র, চাপাতি, ছুরিসহ আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক হামলা, আক্রমণ, লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে আঘাত করে। এমনকি তাদেরকে চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষার্থীদেরকে হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে মারতে দেখা যায়।

১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটায়। রংপুরে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে ১৫ গজ দূর থেকে যেভাবে বুক লক্ষ্য করে গুলি করা হয়, তা থেকে পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। শুধু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নয় তাদের সমর্থনে থাকা মানুষদের উপরেও আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের হাত থেকে শিশু কিশোর বৃদ্ধও বাদ পড়েনি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা শিশু, কারখানা থেকে বের হয়ে আসা শ্রমিক, গ্যারেজ থেকে বের হয়ে রিকশাচালক, রাস্তা পার হতে গিয়ে কিশোর, বাসার গেটে বৃদ্ধ নারী- কেউ পুলিশের নির্বিচার গুলি থেকে বাঁচেনি। হাসপাতালে পা, হাত, চোখ হারানো মানুষের সংখ্যা অনেক। শুধু ভূমি থেকে নয়, আকাশ থেকেও হেলিকপ্টার দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাধানযোগ্য একটি সমস্যাকে শুধু দায়িত্বহীন বক্তব্য, উস্কানিমূলক আচরণ, অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতার দম্ভ, নাগরিকদের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও জবাবদিহিহীন শাসনব্যবস্থা কীভাবে ভয়ংকর পর্যায়ে নিয়ে গেছে সেটা সাধারণ নাগরিকেরা দেখে স্তম্ভিত হয়েছেন। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে যাদের মধ্যে রয়েছে নিরীহ শিক্ষার্থী ও মূলত বিরোধী দলীয় নেতা ও কর্মী। এদের সবাইকে পাইকারিভাবে গণ-গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি-ব্রাশ-ফায়ার ও সংঘর্ষে ১৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ অন্তত ২৬৬ জন মারা গেছেন বলে দাবি আন্দোলনকারীদের, যা নিঃসন্দেহে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। অন্যদিকে সরকারি সূত্র ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পুলিশ ২১টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামকে দাফন করার জন্য দিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.