জুনে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২–৮ ডিগ্রি বেশি

0
140
সূর্যের উত্তাপ থেকে নিজেকে রক্ষায় গামছা দিয়ে মাথা-মুখ ঢেকেছেন তিনি। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর, রাজশাহী

দেশে গত মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি জুন মাসেও কম বৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।

দেশে গতকাল সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল দিনাজপুরে—৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই তুলনায় খানিকটা তাপ কমলেও গরমের অনুভূতি একটুও কমেনি। এ সময়ে বৃষ্টি বড় কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। দেশের দুয়েক জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হচ্ছে বটে, তবে তাতে গরম কমছে না। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এখন বৃষ্টি বয়ে আনবে মৌসুমি বায়ু। তা আসতে দেরি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু সংগঠিত হওয়ার পরপরই বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী সোমবারের আগে দেশজুড়ে মৌসুমি বায়ু বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

শুধু বাংলাদেশে নয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতের হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনাম—এই পুরো অঞ্চল এক তাপপ্রবাহের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে গেছে।মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, আবহাওয়াবিদ, আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে মূলত টেকনাফ অঞ্চল দিয়ে। ৩০ বছরের গড় হিসাবে ৩১ মে টেকনাফ, ১ জুন কক্সবাজার, ২ জুন চট্টগ্রাম এবং ৪ থেক ৫ জুন দেশের মধ্যাঞ্চলে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে। এই সময়ের কিছু হেরফের হয়েছে এবার। তবে এর আগেও এমন হেরফের হয়েছে। যেমন গত বছরে মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটতে ২৩ জুন পর্যন্ত সময় লেগেছিল। ২০২১ সালে এই মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটেছিল ১৪ জুন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল সোমবার বলেন, জুন মাসে সাধারণত দেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্টেশনভেদে এ তাপমাত্রা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি আছে।

 6. দিনে দিনে বাড়ছে গরমের দাপট। গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে অষ্ঠাগত প্রাণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ আর গরমে হাঁপিয়ে উঠছেন লোকজন। গরম থেকে রেহাই পেতে শরীরে পানি ঢালছেন এক ব্যক্তি। বেলা ১১টার দিকে, রেলস্টেশন এলাকা, সিলেট। ছবি: আনিস মাহমুদ
6. দিনে দিনে বাড়ছে গরমের দাপট। গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে অষ্ঠাগত প্রাণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ আর গরমে হাঁপিয়ে উঠছেন লোকজন। গরম থেকে রেহাই পেতে শরীরে পানি ঢালছেন এক ব্যক্তি। বেলা ১১টার দিকে, রেলস্টেশন এলাকা, সিলেট।

তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়, যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি হলে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন আবহাওয়ার যে বিজ্ঞপ্তি দেয়, সেখানে দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় দেওয়া পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার তথ্য অনুসারে, এই ৪৪টি স্টেশনের মধ্যে ৩৯টিতেই তীব্র এবং মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

আর গতকাল সন্ধ্যায় দেওয়া আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, রাজশাহী ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ আজ মঙ্গলবারও থাকতে পারে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বান্দরবান ও রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য জেলাসহ ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে বৃষ্টিপাতও কমে গেছে। অধিদপ্তরের ৪৪টি স্টেশনের কোথাও বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নেই। তবে সামান্য বৃষ্টি দুয়েক জায়গায় হলেও দ্রুতই সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যেমন গত রোববার ফেনীতে দেশের সর্বোচ্চ ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এরপরই সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল সেই তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতের হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনাম—এই পুরো অঞ্চল এক তাপপ্রবাহের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে গেছে। গরম পড়েছে সবখানে। এখন আকাশ মেঘমুক্ত থাকছে এবং দিনে ৮ থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা প্রখর সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ছে। এ অবস্থা আগামী সোমবার পর্যন্ত চলতে পারে। এরপর মেঘমালা সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি হতে পারে।

গত মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। সপ্তাহ ধরেই চলে সেই গরম। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে দেখা দেয় লঘুচাপ। সেটি নিম্নচাপ থেকে ক্রমে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হয়। এ ঘূর্ণিঝড় ১৪ মে কক্সবাজার উপকূল পার হয়। মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দুই দিন পর থেকে। কয়েক দিন বৃষ্টির পর আবার শুরু হয় প্রচণ্ড গরম। মে মাসের শেষ থেকে জুনের শুরুতে তা অব্যাহত রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.