জীবনের একটা বড় শখ ছিল ভর্তি পরীক্ষা দেব: তাসনিয়া ফারিণ

0
25
অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ, ছবি: ফেসবুক থেকে

৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো রাইজ অ্যাবাভ অল। আয়োজক ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন অ্যান্ড কনসালটেন্সি। অনুষ্ঠানে আরও কয়েকজন অতিথির পাশাপাশি অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য দেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। পড়ুন তাঁর বক্তব্যের নির্বাচিত অংশ।

আমার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম ছোট জেলা—মেহেরপুরে। এরপর কক্সবাজার, পাবনা, অনেক জায়গায় থাকা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন, একদিন বারান্দায় বসে বসে পত্রিকা ওলটাচ্ছি। শেয়ারবাজারের পাতায় একটা ছোট বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল—হলিক্রস স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি। দেখে মায়ের কাছে গিয়ে বায়না ধরি, জীবনে প্রথমবারের মতো ভর্তি পরীক্ষা দিতে চাই।

মানুষের জীবনে কত অদ্ভুত শখই তো থাকে। আমারও সে রকমই একটা শখ ছিল—ভর্তি পরীক্ষা দেব। বায়না ধরার পর মা আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আমি পরীক্ষা দিই। সৌভাগ্যবশত, সুযোগ হয় হলিক্রস স্কুলে।

সেটা ছিল আমার জীবনের প্রথম সফলতা। সফলতার স্বাদ পাওয়ার পর আমার জীবনের প্রথম ‘রিয়েলিটি চেক’টাও পাই। কারণ, (পরের পথটা) যতটা সহজ মনে হয়েছিল, ততটা নয়। ঢাকায় আসার পর নিজেকে মনে হচ্ছিল স্মল ফিশ ইন আ বিগ পন্ড (বড় পুকুরের ছোট মাছ)।

অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ
অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ

আমরা যাঁরা ছোট শহর থেকে ঢাকায় এসেছি, আমরা জানি ঢাকায় মানিয়ে নেওয়াটা কত কঠিন। অনেক ধরনের ঘটনাই ঘটেছে আমার সঙ্গে। যেমন একবার বাস থেকে নামতে গিয়ে ডান পা দিয়ে নামব নাকি বাম পা দিয়ে—এই দ্বিধায় পড়ে পা ভেঙে ফেলেছিলাম। সহপাঠীরাও আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেত। খুব সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি প্রশংসা করত, ‘তোর হাতের লেখা খুব সুন্দর।’ পরক্ষণেই বলত, ‘আমার অ্যাসাইনমেন্টটা একটু করে দে না।’ এই মিষ্টি কথায় ভুলে সারা রাত জেগে অনেকের অ্যাসাইনমেন্ট করে দিয়েছি। এ রকম অনেকবার বোকা হয়েছি।

অবশেষে শেখা শুরু করলাম, ঢাকার জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখলাম। আস্তে আস্তে আমার ফলও ভালো হতে শুরু করল। আমার মা সব সময় আমাকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রাখতেন। ছোটবেলায় নাচ-গান শিখতাম। কিন্তু পেশা হিসেবে নেওয়ার কোনো চিন্তা ছিল না। উচ্চমাধ্যমিকের পর, ২০১৭ সালে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পাই। আমার চেয়ে মা-ই বেশি খুশি ছিলেন—মেয়ে বড় পর্দার নায়িকা হবে। কিন্তু শুটিং অর্ধেক হওয়ার পর সিনেমাটাই ‘নাই’ হয়ে যায়। মাঝখানে আমি এক মাস সেমিস্টার ড্রপ দিই। পড়াশোনা, সিজিপিএ তলানিতে যেতে থাকে। তখন অনুধাবন করি, কঠোর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, অনুভূতি থাকার পরও ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন না হয়, আপনি যেকোনো জায়গায় আটকে যেতে পারেন।

নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেব

অতঃপর আমি আমার প্ল্যান বি-তে (যেটা আপনাদের অধিকাংশেরই প্ল্যান এ) মনোনিবেশ করি, অর্থাৎ পড়ালেখা। বিইউপি (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস) থেকে স্নাতক করি ২০১৯ সালে। ওই সময়ে খুব ভালো একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্নশিপের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেটা প্রত্যাখ্যান করি। চেয়েছিলাম নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেব। ২০১৯ সালটা আমি দেখব। যদি হয় হলো, নাহলে অন্য কিছু করব।

তাসনিয়া ফারিণ
তাসনিয়া ফারিণ

সেই বছর, ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইনস ডেতে আমার ক্যারিয়ার পরিবর্তন করে দেয় এক্স বয়ফ্রেন্ড। এই এক্স বয়ফ্রেন্ড কিন্তু সেই এক্স বয়ফ্রেন্ড না। এটা একটা নাটকের নাম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এই পথে কি কোনো ঝুঁকি ছিল না? অবশ্যই ছিল। অনেকবারই মনে হয়েছিল, ছেড়ে দিই। অনেক হয়েছে, আর না। আমার সত্যিকার ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’, বর্তমানে যে আমার স্বামী, আমরা একসঙ্গে জার্মান ভাষা শিখেছিলাম। লেভেলে এ-ওয়ান, এ-টু ও করেছি। পরিকল্পনা ছিল জার্মানি চলে যাব।

নিশ্চয়ই অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। যেখানে ঝুঁকি আছে, সেখানে আছে পুরস্কারও। তাই বলে আবার জুয়া খেলতে যাবেন না। সেখানে শুধু ঝুঁকিই আছে, পুরস্কার নেই।

চলার পথে ভালো-মন্দ অনেক কিছুরই মুখোমুখি হতে হয়েছে। যেমন যে পত্রিকায় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখেছিলাম, সেই পত্রিকারই প্রথম পাতায় হয়তো সকালে আমার ছবি দেখেছি। বিকেলেই দেখি কোনো এক অচেনা নিউজ পোর্টাল লিখেছে, ‘এ কী করলেন তাসনিয়া ফারিণ, দেখুন ৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ভিডিও!’ ভয়ে ভয়ে প্লে করতেই বাজতে শুরু করল, ‘আজ রঙে রঙে রঙিন হব।’ আমি অবাক! (হাসি)

অভিনেত্রী  তাসনিয়া ফারিণ
অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ

জীবনে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে। যখন নাটকে খুব ভালো সময় যাচ্ছিল, তখন ওটিটিতে কাজ শুরু করি। অনেকে বলছিল, ‘তুমি কি পাগল! নাটকের এত ভালো সময়, সামনে ঈদ। এসব ছেড়ে ওটিটির কাজে সময় দিচ্ছ!’ কিন্তু আমি চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম।

আমি মনে করি, ঝুঁকি নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে ঝুঁকির মূল্যায়নটাও গুরুত্বপূর্ণ। জানতে হবে কোথায় চলব, কোথায় থামব, কখন বিরতি নেব। এই সিদ্ধান্তগুলোই আদতে আপনাকে তৈরি করে। শাহরুখ খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যা আপনি অপছন্দ করেন, সেটা আগে করেন। যা পছন্দ করেন, সেটা পরে করার জন্য রাখেন। আমিও কিন্তু তা-ই করেছি। পড়ালেখাটা আগে শেষ করেছি, তারপর নিজের আগ্রহের পেছনে ছুটেছি। একই কথা মার্ক টোয়েনও বলেছেন, ‘যদি তোমাকে একটা ব্যাঙ খেতে হয়, সকালেই খেয়ে ফেলো। আর যদি তোমাকে দুটো ব্যাঙ খেতে বলা হয়, বড়টা আগে খাও।’ অর্থাৎ কঠিন কাজটা আগে করে ফেলো। সাফল্যের এই মন্ত্রগুলো মনে রাখলে আশা করি আপনিও সফল হবেন। তাই বলে আবার ব্যাঙ খেতে যাবেন না!

(ঈষৎ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.