জামিন ঠেকাতে মিতুর বাবার আবেদন, মুক্তি পাননি বাবুল

0
18
বাবুল আক্তারের সঙ্গে মাহমুদা খানম মিতু। ছবি: সংগৃহীত
নিজের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে ভাড়াটিয়া গুন্ডা দিয়ে হত্যা মামলার আসামি ও পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
অন্যদিকে, বহুল আলোচিত মিতু হত্যা মামলার আসামি বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের নথি শেষ রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালেও তিনি মুক্তি পাননি।
 
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাবুলের জামিন বাতিল চেয়ে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজের আদালতে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
 
এ ব্যাপারে মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, এই মামলায় ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেছে। এখন প্রধান আসামি জামিনে মুক্তি পেলে সাক্ষীদের ক্ষতি হতে পারে।
 
মোশাররফ হোসেনের আবেদনটি বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালতে আজ (রোববার) উত্থাপন করা হয় বলে নিশ্চিত করে মোশাররফের আইনজীবী মো. মনির হোসেন রানা বলেন, আবেদনটির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির পর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
 
উচ্চ আদালতে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মোশাররফ হোসেনের করা আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হবে। যেহেতু চেম্বার জজ আদালতে আবেদনটি অপেক্ষমাণ আছে তাই সেটির আদেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
 
অন্যদিকে, প্রায় তিন বছর সাত মাস কারাগারে থাকার পর গত বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাই কোর্ট বেঞ্চ জামিনের আদেশ দেন।
 
রোববার সকালে জামিন আদেশের অনুলিপি মিতু হত্যা মামলার বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই আদালত থেকে বেইল বন্ড ইস্যু করা হয় বলে জানান বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী।
 
এরপর বাবুলের মুক্তি হতে পারে এমন গুঞ্জনে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের বাইরে জড়ো হন গণমাধ্যমকর্মীরা। সন্ধ্যার দিকে কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ভিতরে যান তার বর্তমান স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা। তার কিছু সময় পর বাবুল আক্তারের স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
 
এ বিষয়ে কারাগারের মূল ফটকের বাইরে বাবুল আক্তারের আরেক আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী উপস্থিত হয়ে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দেরিতে বেইল বন্ড পৌঁছানোর কারণে তাদের দাপ্তরিক সব কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ (রোববার) বাবুল আক্তার মুক্তি পাননি। কাল সকালে মুক্তি পেতে পারেন।
 
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সে সময়কার চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসপি বাবুল আক্তার ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই বন্দরনগরীতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
 
ঘটনার পর টানা সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে না পারার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল। পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় এবং মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন।
 
তবে মিতুর বাবার করা সেই মামলা আদালতে না টেকার পর বাবুলের মামলাটিই আবার পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই এর হাতে গ্রেপ্তার হন বাবুল। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। গত বছরের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
 
মিতু হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলার ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ মোট ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে বাবুল আক্তার গত ১৪ অগাস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। বিচারক তা নাকচ করে দিলে তার আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.