জাপানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্দরে পড়ে আছে

0
220
চট্টগ্রাম বন্দর
  • চিকিৎসা সরঞ্জাম চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকার ঘটনা আগেও ঘটেছে।
  • চিকিৎসা সরঞ্জাম ও উপহারের অ্যাম্বুলেন্স বিভিন্ন জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।
জাপানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্দরে ফেলে রাখার ফলে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে জাপানের কাছে স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা চাইলে তারা দিতে চাইবে না।

সৈয়দ আবদুল হামিদ, অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো পাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি)। তারা বলছে, এসব সরঞ্জাম খালাস করতে শুল্ক–কর আসে ২২ কোটি টাকা। সেই টাকা তাদের নেই। তারা এই শুল্কছাড় অথবা অর্থ বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে গত জুলাই থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। ওদিকে বন্দরের মাশুলও (চার্জ) বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি যন্ত্রপাতি দ্রুত খালাসের অনুরোধ জানান।

সিএমএসডির উপপরিচালক তউহীদ আহমদ বলেন, করোনাকালে চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার পাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তবে তার বিপরীতে শুল্ক দেওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়েনি। এ কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।

২২ কোটি টাকা শুল্কের জন্য ৭৭ কোটি টাকার সরঞ্জাম আটকে আছে ৫ মাস। খালাসের অনুরোধ জানিয়েছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূতও।

চিকিৎসা সরঞ্জাম অনুদান দিতে জাপান ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে। চুক্তির আওতায় সরঞ্জামগুলো কয়েকটি চালানে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে গত জুনে। এসব সরঞ্জাম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করার কথা।

নথিপত্রে দেখা যায়, গত ২৮ জুলাই সিএমএসডি একটি চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। সেখানে জাপানের চিকিৎসা সরঞ্জাম খালাসের জন্য শুল্ক–কর বাবদ অর্থ চাওয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, অর্থসচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান ও নৌপরিবহনসচিবকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে জাতীয় স্বার্থে শুল্ক মওকুফ অথবা শুল্ক ও বন্দরের মাশুল বিলম্বে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে জাপানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম খালাসের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট অনুবিভাগ) নীলুফার নাজনীন গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘চিঠিতে বলেছি বাজেট পেলে আমরা টাকা পরিশোধ করে দেব। তার আগে যন্ত্রপাতি খালাসের ব্যবস্থা করা হোক। বিষয়টি এনবিআর ও চট্টগ্রাম বন্দর দেখছে। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।’

এনবিআর সূত্র বলছে, সরকারের নির্ধারিত কিছু খাত ছাড়া সব পণ্যেই শুল্ক–কর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। অনুদানের সরঞ্জামে শুল্ক ছাড় দিতে হলে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়। ওদিকে বন্দরের মাশুল মওকুফ করার ক্ষমতা রয়েছে শুধু নৌ প্রতিমন্ত্রীর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, প্রতিমন্ত্রী চাইলে পুরোটা কিংবা অর্ধেক মওকুফ করতে পারেন।

চিকিৎসা সরঞ্জাম দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকার ঘটনা আগেও ঘটেছে। গত এপ্রিলে বৈশ্বিক একাধিক সংস্থা ও তহবিল থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। এ নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর পড়ে আছে অনুদানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সেগুলো খালাসে তৎপরতা শুরু হয়। খালাস হয় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে।

শুধু বন্দরে নয়, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও উপহারের অ্যাম্বুলেন্স বিভিন্ন জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘আইন বলি কিংবা নিয়ম বলি, সব তো মানুষের জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তরিকতা থাকলে আরও আগে চিকিৎসা সরঞ্জাম খালাস হয়ে যেত।’ তিনি বলেন, জাপানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্দরে ফেলে রাখার ফলে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে জাপানের কাছে স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা চাইলে তারা দিতে চাইবে না।

আরিফুর রহমান

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.