পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। এ ময়দানে ৩৫ হাজার মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে এর আশপাশের এলাকার সড়কেও ঈদের নামাজ আদায় করেন অনেক মুসল্লি। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় এ ঈদগাহ ময়দান এবং এর আশপাশ মিলিয়ে প্রতিবছর ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য ময়দানটিকে প্রস্তুত করতে এবার ২০ দিন সময় লেগেছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। তাঁরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ এ মাঠে নামাজ আদায় করেন। সে কারণে নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠ প্রস্তুত করা হয়।
২০০০ সাল থেকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতির দায়িত্ব পালন করছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন। করপোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর কাজটি করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি (ডিএসসিসি)। করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, এ বছর তীব্র গরমের কারণে মাঠে পর্যাপ্ত ফ্যান লাগানো হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য বোতলজাত পানির পাশাপাশি ওয়াসার পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
১৬ বছর ধরে ঈদের নামাজের জন্য জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছে পিয়ারু সরদার ডেকোরেটর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির এ কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, পুরো মাঠ প্রস্তুত করতে ২০ থেকে ২২ দিন লাগে। দিন-রাত কাজ করেন দেড় শতাধিক শ্রমিক। এ বছর মাঠের প্যান্ডেল তৈরি করতে ৪৩ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রয়োজন হয়েছে ১৫ টনের বেশি দড়ির। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করতে ১ হাজার ৯০০টি ত্রিপল টাঙানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, ঈদগাহ মাঠে ৫৫০টি সিলিং ফ্যান ও ১৫০টি স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টিউবলাইট লাগানো হয়েছে ৭০০টি। এ ছাড়া এবারও নারীদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে ৩ হাজার ৫৮০ জন নারী নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মাঠ প্রস্তুতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানান, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার অতি গুরুত্বপূর্ণ ২৫০ পুরুষ ও ৮০ নারীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য একটি ফটক, জনসাধারণের জন্য দুটি ফটক (একটি পুরুষের জন্য, আরেকটি নারীদের জন্য) রাখা হয়েছে। একসঙ্গে ১১৩ পুরুষ ও ২৭ নারীর অজুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেন দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাই সবাইকে সতর্ক হতে হবে। অগ্নিঝুঁকি এড়াতে দেশলাই বা গ্যাসলাইট সঙ্গে না আনতে মুসল্লিদের অনুরোধ জানান তিনি।
মেয়র বলেন, আবহাওয়া প্রতিকূল তথা ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হলে বিকল্প হিসেবে জাতীয় ঈদগাহের ঈদের নামাজ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।