জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে অ্যাভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি সংরক্ষণ করতে ‘জুলাই রেভল্যুশন-২০২৪’ হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
‘ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখা’ এবং গণহত্যায় (জুলাই-আগস্ট) দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দেন।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এবং গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল। প্রতিবেদনটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গত মে মাসে সম্পূরক একটি আবেদন করেন রিট আবেদনকারী।
সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ১৪ মে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। অ্যাভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান আহরণ উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি কেন সংরক্ষণ করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি নিয়ে আজ রায় দেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদনটি তিন মাসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। গেজেটের নাম হবে ‘জুলাই রেভল্যুশন-২০২৪ ’। চলমান মামলা হিসেবে বিষয়টি থাকবে। সে জন্য তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রায়ের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, প্রতিবেদনটি অ্যাভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) হিসেবে ও ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে যাতে বাংলাদেশে বিবেচনা করা হয়—এই দুটি দিক বিবেচনায় আইন মন্ত্রণালয়কে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) দিতে বলা হয়েছে। সম্পূরক রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হয়েছে।