পিরোজপুরে পরীমনির ‘গ্যাং গ্রুপ’-এর গল্প ও অন্যান্য

0
112
নিজের গ্রামে পরীমনি

২৪ মার্চ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংহখালী গ্রামে যান পরীমনি। এই গ্রামেরই নানাবাড়িতে জন্মেছিলেন তিনি। আগে অনেকবার গেলেও এবারের যাত্রাটা তাঁর জন্য, গ্রামের মানুষের জন্য ছিল অন্য রকম। এবারের ভ্রমণে প্রথমবার পরীর সঙ্গী স্বামী শরীফুল রাজ ও সন্তান রাজ্য। গ্রামে ফিরে যেন নিজের দুরন্ত শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গেছেন পরী; হয়ে উঠেছেন কিশোরীবেলার শামসুন নাহার স্মৃতি।

চার বছর পর
এসএসসি পরীক্ষার পরপরই গ্রাম ছাড়েন পরীমনি। অভিনয়ে আসার পরও প্রতিবছর কিছুদিনের জন্য গ্রামে ফিরেছেন। গ্রামের রাস্তাঘাট, ঘাস, লতা ও ফুলের সঙ্গে শৈশব-কৈশোরের কত স্মৃতি! গ্রামে ফিরে গায়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে সতেজ হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু গত চার বছর গ্রামে যেতে পারেননি। হাসতে হাসতে পরীমনি বলেন, ‘আগে দুইবার খবর পাঠিয়েও যেতে পারিনি। বড় ব্যাপার ছিল, কোভিড। তা ছাড়া নিজের জীবনে কিছু ঝড়ঝাপটা গেছে। বিয়ে, বাচ্চা হওয়ারও একটা ব্যাপার ছিল। এবার তাই না বলেই রওনা হয়েছিলাম।’

পরী না বললে কী হবে, হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে সবাই বুঝে গিয়েছিল তিনি আসছেন। কারণ, আগেও তাঁর হেলিকপ্টার করে কয়েকবার গ্রামে যাওয়া হয়েছে। এই পথে আর কেই-বা হেলিকপ্টারে আসবেন! ফলে গ্রামের আকাশ সীমানায় হেলিকপ্টার দেখেই দূরদূরান্ত থেকে পরিচিত, অপরিচিত লোকজন ছুটে আসেন। পরী বললেন, ‘সঙ্গে রাজ ও রাজ্য ছিল, এ কারণে মানুষের একটা বাড়তি আগ্রহ ছিল। যখন নামলাম, সবাই ঘিরে ধরেছে। যে মাঠে নেমেছিলাম, ছোটবেলায় জায়গাটা ছিল জলাশয়। এখন মাটি ভরাট করে মাঠ হয়েছে। নামার পর মানুষের ভিড়ে এগোতেই পারছিলাম না। মানুষের এত ভালোবাসা, বাড়ি পৌঁছানোর পর দল বেঁধে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আমাকে ও আমার সন্তানকে দেখতে আসছেন।’

স্মৃতির বর্ষা
ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন পরীমনি। সেই মাঠেই প্রতিবার হেলিকপ্টারে নামেন। কিন্তু এবার হেলিকপ্টার থেকে সেই চিরচেনা পথ, খেলার মাঠটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ‘স্কুলমাঠটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। টিনশেডের স্কুলঘরটিও না। পরে দেখলাম, টিনশেড ভেঙে চারতলা দালান হয়েছে। রাস্তাঘাট সরু হয়েছে। যে বড় স্কুলমাঠটিতে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে খেলতাম, সেই মাঠও ছোট হয়ে গেছে। এসব দেখে মন একটু খারাপ হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল সেই স্কুলজীবনের দিনগুলো,’ বললেন পরী।

কেমন ছিল তাঁর স্কুলবেলা, জানতে চাইলে বললেন, টিনশেডের স্কুলঘরে বৃষ্টি নিয়ে মজার স্মৃতির কথা, ‘সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। স্যার ক্লাস নিচ্ছিলেন। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে স্যারের কথা আমরা অল্প অল্প শুনতে পাচ্ছিলাম। আমরা ফন্দি আঁটলাম, ক্লাস করব না। বৃষ্টি দেখব। স্যারকে বললাম, বৃষ্টির শব্দে আপনার কথা কিছুই শুনি না। একটা সময় স্যার বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেলেন। হা হা হা…কী সব মজার দিন ছিল।’

রাজ্যকে নিয়ে হেলিকপ্টারে পরী

রাজ্যকে নিয়ে হেলিকপ্টারে পরী। ছবি : সংগৃহীত

গ্রামে গেলে স্কুলজীবনের বন্ধুদের মনে পড়ে। তবে তাঁর বড় খালার মেয়ে স্বর্ণা ছাড়া ক্লাসের অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হয় না। কেউ বিদেশে, কেউ চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। কেউ বিয়ে করে গ্রাম ছেড়েছেন। তাঁদের কথা বলতে বলতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন পরী।

গ্রামের দিনগুলো
প্রায় দুই সপ্তাহ হলো গ্রামে আছেন পরীমনি। কেমন কাটছে গ্রামের দিন? পরীমনি বলেন, ‘আমাকে, রাজ্যকে দেখার জন্য কত মানুষ আসছেন! দোয়া করছেন, ভালোবাসা দিচ্ছেন, আমাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন; খুব উপভোগ করছি। এত ভালোবাসা কোথায় পাব?’

রাজ্যকে নিয়ে হেলিকপ্টারে পরী

রাজ্যকে নিয়ে হেলিকপ্টারে পরী

কথায় কথায় জানালেন গ্রামের রুটিন, ‘দিনে উঠানজুড়ে দৌড়াদৌড়ি, সন্ধ্যায় সবাই মিলে উঠানে পাটি বিছিয়ে গল্প। ঢাকাতে তো আকাশভরা তারা দেখা যায় না। এখানে তারাখচিত রাতের স্নিগ্ধ আকাশ কী যে সুন্দর দেখায়! ওই দিন রাতে চাঁদের আলোয় উঠানে পাটিতে বসা রাজ্যের ছায়া দেখছিলাম, অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। বৃষ্টির রিমঝিম সুরটা এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়। তা ছাড়া এখন তো রোজার মাস, ইফতারে গ্রামের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।’

কয়েক দিন আগে তাঁর স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক স্ত্রীদের নিয়ে এসেছিলেন, জানালেন পরীমনি, ‘তাঁরা আমাকে নিয়ে স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণা করলেন। কত কথা, যেন শেষই হচ্ছিল না। স্যাররা আমাকে সেই স্কুলজীবনের শামসুর নাহার স্মৃতি নামেই এখনো ভালোবাসেন, আমার আজকের অবস্থান নিয়ে গর্ব করেন।’

‘গ্যাং গ্রুপ’-এর গল্প
যে স্কুলে পড়েছেন, স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সেই ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন পরীমনি। ঘুরে ঘুরে স্কুলজীবনের গল্প শুনিয়েছেন রাজকে। স্কুল চার-পাঁচজনের একটা দল ছিল তাঁদের। সবাই ‘গ্যাং গ্রুপ’ বলে ডাকত। পরীসহ সেই দলে ছিলেন লাইজু, স্বর্ণা, ঊর্মি ও হালিমা। কোনো ছেলে প্রেম নিবেদন তো দূর, তাঁদের দিকে তাকাতেও সাহস পেত না।

হেলিকপ্টারে পরী

হেলিকপ্টারে পরী। ছবি : সংগৃহীত 

একবারের একটি ঘটনার কথা বললেন পরী, ‘একটি ছেলে আমাদের একজনকে প্রেম নিবেদন করার চেষ্টা করেছিল। ওকে সাইজ করার জন্য আমরা ঘুরছিলাম। একদিন দেখি, কালভার্টের ওপর বসে আছে। কাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম আমরা। আমরা যে রাস্তা দিয়ে হাঁটতাম, আড্ডারত ছেলেরা পালাত। এসব গল্প যখন বলছিলাম, তখন রাজ আমাকে বলে, “ওহ, তাহলে তুমি ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের।” হা হা হা…।’

বারবার আসব
সিংহখালী গ্রামে জন্ম, এখানেই তার নাড়ি পোঁতা। জন্মস্থানের টান তো থাকবেই। ঢাকাই ছবির এই নায়িকা বলেন, ‘গ্রাম আমার প্রথম প্রেম। এ গ্রামেই আমি জন্মেছি, এখানেই আমার সোনালি সময় কেটেছে। এ গ্রামে আমার মা, নানি ও খালার কবর। এখানে আমি বারবার আসব। শুধু আমার গ্রাম নয়, যেকোনো গ্রামই আমার পছন্দ। গ্রামের শান্ত সকাল, শান্ত বিকেল, রাতের নীরবতা আমি উপভোগ করি।’ গ্রামে আসার চার-পাঁচ দিন পর ডাবিং থাকায় ঢাকায় ফিরে গেছেন রাজ। পরী জানালেন, জরুরি কাজ না পড়লে তিনি থাকবেন আরও কয়েক দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.