জনতা ব্যাংক থেকেই সালমান এফ রহমানের ঋণ ২৫ হাজার কোটি টাকা

0
21
সালমান এফ রহমান

ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের সাথে জড়িয়ে আছে বেক্সিমকো গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমান। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ একাই ফোকলা করে দিয়েছে জনতা ব্যাংককে।

গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে হাতিয়ে নেয়া হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। মানা হয়নি একক ঋণ গ্রহীতার সীমাও। বিপুল অর্থ করায়ত্তে আনতে এক মাসেই ৮টি নতুন কোম্পানি খোলা হয়। বাধা না দিয়ে উল্টো অনিয়মে সহায়তা করেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

জনতা ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপ একাই নিয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের এক চতুর্থাংশের বেশি (২৫.৫১%)। লঙ্ঘন হয়েছে একক ঋণগ্রহীতার সীমাও। এসব ঋণের বড় অংশই এখন খেলাপি হওয়ার পথে। ফলে জনতা ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়েছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ছিল ২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৬ হাজার কোটিতে। পরের সাড়ে ৩ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। ঋণ নিতে এক বছরে নতুন কোম্পানি খুলেছে ৯টি। এক মাসেই খোলা হয় ৮টি। প্রভাব খাটিয়ে এসব নতুন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়েছেন সালমান এফ রহমান। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিয়ম লঙ্ঘন করে দেয়া এ অর্থ ফেরত আনা কঠিন।

বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, জনতা ব্যাংক আগে ভালো ছিল। এখন এটার অবস্থা এত খারাপ হয়েছে যে পুনরায় চাঙ্গা করা কঠিন হবে। একটি গোষ্ঠীই এক-চতুর্থাংশ ঋণ নিয়েছে। ঋণগ্রহীতার সীমাও মানা হয়নি। প্রভাবশালী হওয়ায় চাপ সৃষ্টি করেছে আর কর্তৃপক্ষ তাদেরকে টাকা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়েছে তাদেরকে ধরা দরকার। যে প্রতিষ্ঠানের কোনো আয় নেই, তাকে এত টাকা ঋণ দেয় কেন? সব ব্যবসা একসাথে করলেও ঋণের সমমূল্য হবে কিনা সেটিও ভাবা দরকার। এসব তো বোর্ডের ধরা পড়ার কথা; কিন্তু পড়েনি!

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কাগজকলমে কোম্পানি তৈরি করে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে যাচ্ছেতাইভাবে এত টাকা নিয়েছে। এভাবেই ব্যাংকিং খাতকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মেয়াদউত্তীর্ণ হলেও খেলাপি করা হয়নি বেক্সিমকোর ঋণ। পুনঃতফসিল করা হয়েছে দফায় দফায়। এরপরও বেক্সিমকোর ঋণের অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনিয়ম বন্ধ না করে ব্যাংক লুটপাটের সহযোগিতা করেছেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকাদার।

বিষয়টি নিয়ে খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বিভিন্নভাবে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংক দুর্বলতার দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরও যায়। তারা চাইলে এসব সমস্যাগুলো কমাতে পারতো। তার মতে, নিয়ম লঙ্ঘন করে নেয়া বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ আদায় অনেকটাই অনিশ্চিত।

আলমগীর হোসেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.