মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে একজন সিরাজগঞ্জের নিখোঁজ এক চিকিৎসকের স্ত্রী। ২৬ জুলাই থেকে ওই চিকিৎসক সোহেল তানজিম ও তাঁর স্ত্রী মাইশা ইসলাম ওরফে হাফসা নিখোঁজ উল্লেখ করে ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নিখোঁজ চিকিৎসক সোহেল তানজিমের বাবা হেলালউদ্দিন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার কুলাউড়ার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট। পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করলে নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মাইশা ইসলামের (২০) নাম থাকার বিষয়টি জানা যায়।
গত ৩১ জুলাই এনায়েতপুর থানায় করা জিডিতে হেলালউদ্দিন উল্লেখ করেন, ২৬ জুলাই থেকে স্ত্রীসহ নিখোঁজ তাঁর ছেলে সোহেল তানজিম। ১০ মাস আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন তানজিম। আড়াই মাস আগে পরিবারের অমতে মাইশা ইসলামকে বিয়ে করেন। এরপর হাসপাতালের পাশে একটি ভাড়াবাসা নিয়ে তাঁরা স্বামী–স্ত্রী থাকতেন।
হেলালউদ্দিন বলেন, ঈদুল আজহার আগের দিন তানজিম তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম বাড়িতে আসেন। ঈদের পরদিন আবার চলে যান। মাত্র এক দিন তাঁর ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও কথা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের নিখোঁজের খবর জানতে পেরে থানায় জিডি করেন। হঠাৎ আজ বিকেলে জানতে পারেন, ছেলের স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
মাইশার ভাই ওমর ফারুক মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা সংবাদমাধ্যমে আমার বোনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে আমার বোন কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সে স্থানীয় চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নাটোর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। সম্প্রতি অনলাইনে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। পরে তাঁরা বিয়ে করে।’
এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করা হলে তাঁরা খোঁজখবর শুরু করেন। একপর্যায়ে তানজিম যে এলাকায় ভাড়া থাকতেন, সেই এলাকার বাসিন্দারা জানান, ২৬ জুলাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তানজিমকে এলাকা ছেড়ে যেতে দেখেছেন তাঁরা।
২৭ বছর বয়সী তানজিম সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামে। তানজিম স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের পাশে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টি উলি গ্রামের যে বাড়ি থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। ‘অপারেশন হিল সাইট’ নামের ওই অভিযানে সংগঠনের প্রধানসহ ১০ জনকে আটকের কথা জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে চার পুরুষ এবং ছয়জন নারী। এ ছাড়া তিনটি শিশুও ছিল বাড়িটিতে। অভিযানে তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণসামগ্রী উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়।