ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণের কাজ চলছে, চারজন এখনো নিখোঁজ

0
172
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন রুম

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ চারজনকে আজ রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর দগ্ধ চার কর্মচারীকে গতকাল শনিবার রাতেই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসএইচআর নেভিগেশনের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির।

এদিকে গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত জাহাজে মজুত করা প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল থেকে প্রায় ৪ লাখ লিটার তেল ‘ওটি মৃদুলা’ নামের অপর একটি জাহাজে অপসারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ডুবে যাওয়া তেলবোঝাই জাহাজটি অনেকটা ভেসে উঠেছে। এ কাজে সহায়তা করছে কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দুটি জাহাজ।

কোস্টগার্ডের এক সদস্য হিমেল আহমেদ জানান, নদীতে যাতে তেল ছড়িয়ে জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য অত্যাধুনিক তেল অপসারণকারী ল্যামোর সংযুক্ত বোট দিয়ে কাজ করছে কোস্টগার্ড।

নিখোঁজ চারজন হলেন জাহাজের সুপারভাইজার চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান (৪৮), চালক চাঁদপুরের রুহুল আমিন (৫৫), কর্মী হবিগঞ্জের মাদবপুর উপজেলার সমুজদিপুর গ্রামের আবদুস সালাম ওরফে হৃদয় (২৬) ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের আকরাম হোসেন (৪০)।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ ৪

জাহাজ থেকে জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য সুগন্ধা নদীর তীরের একটি মসজিদে যাওয়ায় জাহাজের মো. বেলায়েত হোসেন নামের এক বাবুর্চি রক্ষা পান। তিনি নামাজ শেষে ট্রলারে করে জাহাজের কাছাকাছি এসে দেখেন, জাহাজে আগুন লেগেছে। তিনি বলেন, নিখোঁজ চারজনই ইঞ্জিন রুমের ওপর তলার কেবিন ও চালকের রুমে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে ইঞ্জিন রুম বিস্ফোরিত হলে কেবিনসহ ওপরের অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে নদীতে ছিটকে পড়ে। তাদের কী হয়েছে, তিনি বুঝতে পারছেন না।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, দগ্ধ চারজন নদীতে ঝাঁপ দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। দগ্ধ চারজন হলেন পাবনার শাকিল (৩৫), চাঁদপুরের ফরিদুল আলম (৫৩), পিরোজপুরের ইকবাল হোসেন (২৭) ও বরিশাল বাকেরগঞ্জের শিবপুর গ্রামের মাইনুল ইসলাম (২৯)।

নিখোঁজ চারজনের স্বজনেরা গতকাল রাত থেকেই সুগন্ধা নদীর পাড়ে অবস্থান করছেন। নিখোঁজ আকরাম হোসেনের ভাতিজা মো. কাইয়ুম (১৯) সুগন্ধা নদীতীরের পৌর খেয়াঘাট এলাকার একটি বাড়িতে রাতভর চাচার খোঁজে অবস্থান করেন। তিনি বলেন, ‘আমার চাচা জাহাজে তেল ভর্তি থাকায় ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারেননি। চাচার কী হয়েছে, সেই চিন্তায় বাড়িতে সবাই উৎকণ্ঠায় আছেন।’

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ইঞ্জিন রুম বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে ওটি মৃদুলা নামের অপর একটি জাহাজে তেল অপসারণে ব্যস্ত কর্মীরা। পুলিশের একটি দল সেখানে আছে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা তেল যাতে নদীতে ছড়াতে না পারে, সে জন্য কাজ করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসএইচআর নেভিগেশনের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির বলেন, অগ্নিদগ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার মালিকপক্ষ থেকে বহন করা হচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় সুগন্ধা নদীতে আজ সারা দিন অনুসন্ধান চালানো হবে।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় নদীতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান চালানো হবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।

গতকাল বেলা দুইটার দিকে সুগন্ধা নদীতীরের সরকারি তেলের ডিপোর কাছে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক সপ্তাহ আগে তেলবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে এসে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তেলের ডিপো-সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করে। জাহাজটিতে প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রল ও ডিজেল) ছিল। এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে খালাস করার অপেক্ষায় ছিল। ঈদুল আজহার ছুটিতে ডিপো বন্ধ থাকায় তেল খালাস করা সম্ভব হয়নি।

২০২১ সালের ১২ নভেম্বর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুনে দগ্ধ হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.