রাজধানীর রায়েরবাজার কমিউনিটি সেন্টার। এটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। সকালে এখানে মশার ওষুধ ছিটানোর কর্মীরা হাজিরা দেন। পরবর্তী সময় সেখান থেকেই মশার লার্ভা নিধনের ওষুধ ও ছিটানোর যন্ত্র (স্প্রে মেশিন) নিয়ে কাজে বেরিয়ে যান।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ১৪ মিনিটে ওই কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকটি তালাবদ্ধ। ভেতরে কয়েকজনকে রান্নার জোগাড়যন্ত্রে ব্যস্ত দেখা গেল। ভেতর থেকে একজন পাশের আরেকটি ফটক দিয়ে ভেতরে যাওয়ার ইশারা করলেন।
ভেতরে গিয়ে কথা হলো মাহবুবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি ওই কমিউনিটি সেন্টারের নিরাপত্তা প্রহরী। তিনি জানান, মশকনিধন সুপারভাইজার ও মশকনিধনকর্মীদের কেউ কাজে আসেননি।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটিতে ছুটি বাতিল
অথচ দৈনিক কাজের সূচি অনুযায়ী, কর্মীদের সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দেওয়ার কথা। এরপর কর্মীরা চলে যাবেন মশার লার্ভা নিধনের কাজে।
পরবর্তী সময় ওই কমিউনিটি সেন্টারের নিচে সকাল ৬টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেও কোনো মশকনিধনকর্মীকে কাজে আসতে দেখেননি এই প্রতিবেদক।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ঢাকা উত্তর সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের (স্বাস্থ্য বিভাগ) সব কর্মকর্তা ও কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে গুলশানে সংস্থাটির নগর ভবনে আয়োজিত এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। পরে ওই দিন বিকেলেই এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করে তা গণমাধ্যমকে জানায় ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে থাকায় জরুরিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটি বাতিলের আদেশ জারি করা হলেও আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোনো মশকনিধনকর্মী কাজে যাননি। সকাল সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ২৯, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিন এ চিত্র দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৬টায় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে ফেরার আগে মশকনিধনকর্মীদের কাজে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম ওয়াসিমুল ইসলামের কাছে। তিনি মুঠোফোনে জানান, ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শুধু শুক্রবার ছুটি আছে। আর অন্যান্য দিন কাজ চলবে। চিঠির মধ্যে লেখা ছিল, শুক্রবার ব্যতীত অন্যান্য দিন কাজ হবে। কোনো ছুটিছাটা বা এক্সট্রা যে ছুটি নেয় বা অন্য ছুটি নেওয়া ওগুলো কিছু থাকবে না।
তবে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, মশকনিধন কার্যক্রম ও জলাবদ্ধতা নিরসনে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঢাকা উত্তর সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও শাখার সব পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত শ্রমিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
সংস্থাটির সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান স্বাক্ষরিত ছুটি বাতিলের ওই অফিস আদেশে শুক্রবার ব্যতীত বলে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীকালে ৬টা ৩৭ মিনিটে মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে গিয়েও কারও দেখা পাওয়া যায়নি।
৬টা ৪৪ মিনিটে রাজধানীর কৃষি মার্কেট বাজারসংলগ্ন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধনের কার্যালয়ের দরজাও তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ওই সময় সেখানে ছিলেন ওয়ার্ডটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সরদার নূর মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, তাঁদের ১০৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সবাই কাজে এসেছেন। কাজ শেষে ৯টার দিকে হাজিরা দেবেন। তাঁদের ছুটির দিনেও কাজ করতে হচ্ছে।
ছুটি বাতিল করার পরও মশকনিধনকর্মীদের কাজে না আসার বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ওই ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যক্রমের সুপারভাইজার আনোয়ারুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ তাঁদের সাপ্তাহিক ছুটি। এ দিন কাজ করার বিষয়ে তাঁদের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা কেউ কাজে যাননি।