
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রচার–প্রচারণা পুরোদমে জমে উঠেছে। ২৫ মে ভোট, হাতে বেশি সময় নেই। সকাল থেকেই প্রার্থীরা বেরিয়ে পড়েছেন গণসংযোগ ও প্রচারে। ভোটারদের বাগে আনতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থান পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অলিগলিতে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে মাইকে ভেসে আসছে ছন্দময় স্লোগান। একেবারে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান গতকাল বৃহস্পতিবার কোথাও প্রচারণা চালাননি। তবে সকালে নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা গাজীপুর শহরের জয়দেবপুর বাজার রোডে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এ সময় তাঁরা আজমত উল্লার পক্ষে ভোটারদের সমর্থন ও ভোট প্রত্যাশা করেন।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতীক। নৌকা মার্কায় আজমত উল্লা সাহেব নির্বাচন করছেন। কিন্তু আসলে নির্বাচনটি কার? নির্বাচনটি জননেত্রী শেখ হাসিনার। আজমত উল্লা সাহেবকে ভোট দেওয়া মানে, শুধু আজমত উল্লাকে ভোট দেওয়া না। মনে রাখতে হবে, ভোটটা দেব আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁকে ভোট দেওয়া মানে সার্বিক উন্নয়নে গাজীপুরের উন্নয়নকে শরিক করা। সে জন্য অযথা এবং যেকোনো জায়গায় আপনার মূল্যবান ভোটটিকে পানিতে ফেলবেন না।’
টেবিলঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন সকাল থেকে কোনাবাড়ী এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনিও ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। নির্বাচনের দুই দিন আগে আমাকে দুদকে তলব করা হয়েছে। এর মানে কী? আমাকে তাঁরা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।’
নির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম নির্বাচন করছেন। হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র এই মেয়র প্রার্থী সকাল থেকে টঙ্গী ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের চেরাগ আলী ট্রাক টার্মিনাল ও স্কুল রোড থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। আধুনিক নগর গড়তে ভোটারদের সমর্থন প্রত্যাশা করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন গতকাল সকালে শহরের ছায়াবীথি এলাকায় একটি কলেজ মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে গাজীপুর সিটিকে আধুনিক, পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ইশতেহারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রমিকদের আবাসন, নিরাপত্তা, রাস্তাঘাটসহ নাগরিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি–দুঃশাসনমুক্ত, শ্রমিকবান্ধব ও পরিকল্পিত বসবাসের উপযোগী আদর্শ নগরী হিসেবে গাজীপুরকে গড়ে তুলতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমানকে হাতপাখা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। গতকাল বিকেল চারটায় সদর মেট্রো থানার রেলস্টেশনসংলগ্ন জয়দেবপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে হাতপাখা মার্কার পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সমালোচনা করে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘ইভিএমের ওপর দেশের মানুষের আস্থা না থাকার পরও জনগণের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন কাদের খুশি করতে পাঁচ সিটির ভোট ইভিএমে আয়োজন করছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ২৫ মের নির্বাচনে যদি কোনো কারচুপির আশ্রয় নেওয়া হয় বা ইভিএম ভোট চুরিতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে গাজীপুর থেকে ভোটচোরদের হোতাদের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
গাজীপুর সিটিতে আটজন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি সাধারণ ওয়ার্ডগুলোয় ২৪৩ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ওয়ার্ডগুলোয় ৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতি মহল্লায় বাড়ি বাড়ি সকাল-সন্ধ্যা ছুটছেন। প্রচারপত্র বিতরণ, গণসংযোগ, মুঠোফোনে কল বা অন্যান্য মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করছেন তাঁরা।
গতকাল বিকেল ৫টার দিকে নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু মোড় এলাকায় দেখা হয় প্রায় ১০–১২ জন নারীর সঙ্গে। তাঁরা সবাই মিষ্টিকুমড়া প্রতীকের প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলামের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁদের সবার হাতে ছিল প্রচারপত্র। তাঁদের মধ্যে মোরশেদা আক্তার নামের একজন জানান, তাঁরা মোট ২০ জনের একটি দল। প্রতিদিন সকাল থেকে দুই দলে ভাগ হয়ে প্রচারণায় অংশ নেন তাঁরা।
নগরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হোসেন বলেন, ‘এখন আমাদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চলছে। হাতে সময় খুব কম। আমরা কোনো কোনো ভোটারের কাছে একাধিকবার যাচ্ছি। তাঁদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইনশা আল্লাহ জয়ী হব।’
 
            
















