‘চুমো–কাণ্ডে’ সাময়িক নিষিদ্ধ স্পেনের ফুটবল–প্রধান

0
111
এই চুমোতেই পদ গেছে স্পেনের ফুটবল–প্রধান লুইস রুবিয়ালেসর, ছবি: এএফপি

স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে ফিফা। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবলের কোনো কার্যক্রমে তিনি অংশ নিতে পারবেন না।

আজ বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ ইভান প্যালাসিও তাঁর ক্ষমতাবলে রুবিয়ালেসকে সাময়িক নিষোধাজ্ঞা দিয়েছেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ থেকে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা লুইস রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ২৪ আগস্ট চালু হওয়া শাস্তিমূলক কার্যক্রম শুরু সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে ৯০ দিন বহাল থাকবে।’

ঘটনার শুরু ফিফা নারী বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার মঞ্চে
ঘটনার শুরু ফিফা নারী বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার মঞ্চে, ছবি: এএফপি

রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ফিফা শাস্তিমূলক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর শুক্রবার বিশেষ সভা ডাকে স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, সেখানে পদত্যাগ করবেন রুবিয়ালেস। কিন্তু সভায় রুবিয়ালেস জানিয়ে দেন, তিনি কিছুতেই পদত্যাগ করবেন না। এর জেরে স্পেনের নারী বিশ্বকাপজয়ী ২৩ জনসহ ৭৯ খেলোয়াড় ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জানান, ‘নেতৃত্ব’ পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা স্পেনের হয়ে খেলবেন না।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন স্পেন ফুটবল ফেডারেশন ভুক্তভোগী হেনি হেরমোসোর বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে আইনি ব্যবস্থার হুমকি দেয়। আজ স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ওই খেলোয়াড়ের নামে ছড়ানো বা ওই খেলোয়াড়ের বলা প্রতিটি মিথ্যা কথা প্রমাণ করব আমরা। আমাদের সভাপতির সম্মান রক্ষার্থে যত ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়, নেওয়া হবে।’ এ বক্তব্য সমর্থন করেন আরএফইএফের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসও।

এর পরই এলো ফিফার সাময়িক নিষেধাজ্ঞার খবর।

স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সদ্য পদচ্যুত সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস
স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সদ্য পদচ্যুত সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস, ছবি: রয়টার্স

ঘটনার শুরু ২০ আগস্ট, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সেদিন ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফিফা নারী বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে স্পেন। এরপর পুরস্কার মঞ্চে স্পেনের মিডফিল্ডার হেরমোসো পদক নেওয়ার সময় দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান রুবিয়ালেসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে তিনি তাঁর ঠোটে চুমু দেন। সেই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সমালোচনা হয় সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে।

ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রুবিয়ালেস তখন বলেছিলেন, চুমোর বিষয়টি ছিল পারস্পরিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় হেরমোসোও বলেছিলেন, এ নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। রুবিয়ালেস ও হেরমোসোর এমন কথায়ও বিতর্ক থামেনি। বরং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনার তির ধেয়ে যেতে থাকে রুবিয়ালেসের দিকে। এমনকি হেরমোসোও রুবিয়ালেসের এই কাণ্ডে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তি দাবি করেন।

এর মধ্যেই ফিফা রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিলে ফেডারেশনের বৈঠক ডেকে পদত্যাগ না করার কথা জানিয়ে দেন রুবিয়ালেস। হেরমোসোকে চুমোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘হেনিই আমাকে এতটা উচ্ছ্বসিত করে তুলেছিল। বলেছিলাম, পেনাল্টিটা ভুলে যাও (ইংল্যান্ড গোলরক্ষক যেটা সেভ করেছিল) এবং ছোট্ট একটা “পেক” (দ্রুত চুমু, যেটা গালের পাশে দেয়) হবে? সে বলেছিল ঠিক আছে। চুমুটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সম্মতিসূচক। এটাই মূল ব্যাপার। সম্মতিসূচক চুমু কি আমাকে এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট নয়?’

রুবিয়ালেস এ-ও দাবি করেছেন যে হেরমোসোই তাঁকে আগে দুই বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে শূন্যে তুলেছিলেন এবং তাঁকে নিজের শরীরের দিকে টেনে নিয়েছিলেন।

রুবিয়ালেসের এমন মন্তব্যের পর তাঁর সমালোচনা করে টুইট করেন স্পেনের নারী বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াসসহ অনেকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্পেনের ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপার ইকার ক্যাসিয়াস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক গোলকিপার দাভিদ দে হেয়াও। পুতেয়াস লিখেছিলেন, ‘এটা অগ্রহণযোগ্য।’ আর দে হেয়া লেখেন, ‘আমার কান গরম হয়ে গেছে!’

সম্মতিক্রমে চুমোর বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন হেরমোসো। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, লুইস রুবিয়ালেস তাঁর বক্তব্যে যা যা দাবি করেছেন, বিশেষ করে সম্মতিসূচক চুমুর ব্যাপারটি-তাঁর সঙ্গে এমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি। এগুলো মিথ্যা এবং নিজের সুবিধার জন্য কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার যে সংস্কৃতি তিনি গড়ে তুলেছেন, সেটারই অংশ।’

হেরমোসো এরপর তাঁর বিবৃতিতে যোগ করেন, ‘আমি এটি জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেছি; কারণ, আমি বিশ্বাস করি, খেলাধুলা কিংবা যেকোনো কাজের জায়গায় অসম্মতির পরও কেউ যেন এমন আচরণের শিকার না হয়। নিজেকে অসহায় লেগেছে, আবেগে পরিচালিত একজন যৌনতাবাদী মানুষের স্থান-কাল-পাত্র ভুলে যাওয়া আচরণে, যেখানে আমার কোনো সম্মতি ছিল না। সহজ ভাষায়, আমাকে সম্মান দেওয়া হয়নি।’

রুবিয়ালেসের গতকালের বক্তব্যের পর তাঁর বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘যুদ্ধ’ই ঘোষণা করেছেন স্পেনের ফুটবলাররা। বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়সহ মোট ৭৯ জন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ‘নেতৃত্ব’ পরিবর্তন না হওয়া স্পেনের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত জানান।

তবে রুবিয়ালেসের এমন বেগতিক অবস্থায় তাঁর পাশেই দাঁড়ায় স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন। সংস্থাটি প্রমাণ করতে চাইছে হেরমোসোর বলা ‘সম্মতি ছিল না’ কথাটা মিথ্যা। রুবিয়ালেসই সত্য বলছেন যে সম্মতি নিয়েই তিনি চুমো দিয়েছেন। নিজেদের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করেছে স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন। সেই ছবিগুলোর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছে যে হেরমোসোই চুমো দিতে উৎসাহিত করে তুলেছিলেন রুবিয়ালেসকে।

আপাতত ফিফার নিষেধাজ্ঞায় ফেডারেশনকে ব্যবহারের সুযোগ আটকে গেছে রুবিয়ালেসের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.