চিন্তিত আনোয়ারুজ্জামান, ছক কষছেন আরিফুল

ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট

0
138
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর আরিফুল হক চৌধুরী

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ফল পাল্টে দেওয়ার ভয়ে আছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ কারণে আগামী নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতার বিষয়টি পরিষ্কার করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ২০ মে জনসভা করে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবেন। অন্যদিকে, নিজ দলের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে ভেতরে ভেতরে আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনরা। গত নির্বাচনের মতো নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে তাঁদের মধ্যে। তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দাবি করেছেন দলে কোনো বিভেদ নেই। তাঁকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সিলেট আওয়ামী লীগ।

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী দিলেও বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা থাকায় এখন পর্যন্ত নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারছেন না কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

এ কারণে সিলেটে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারও তেমন জমে উঠছে না। অথচ গত সিটি নির্বাচনে কামরান-আরিফের নির্বাচনী উত্তাপ ছিল ঘরে ঘরে। এবার নির্বাচন নিয়ে তরুণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারপরও আরিফুল হক নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন অনেকটা কৌশলে। আর আনোয়ারুজ্জামান গত কয়েকদিনে চষে বেড়িয়েছেন পুরো নগরী।

আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন এবারের নির্বাচনে আরিফুল হক সতর্কে পা ফেলছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজ দলের আস্থাভাজনদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এমনকি তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন। সম্প্রতি খুব কাছের লোকদের নিয়ে একটি অভিজাত হোটেলে বৈঠক করেন মেয়র।

বৈঠকে তাঁর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা সাদিকুর রহমান সাদিক ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবদুস সামাদ উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠক নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটি ছিল ঈদ-পরবর্তী একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। আরিফ আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন। বৈঠকে নির্বাচন ও রাজনীতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের চেয়ে দেশ বড়, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। এর উল্টো চিন্তা করলে এই মুহূর্তে সিলেটে আরিফুল হকের দরকার। আজ সিলেটের যে আমূল পরিবর্তন সেটি হয়েছে তাঁর কারণেই।

এ বিএনপি নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন মেয়র। তিনি অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। আর আরিফ সেটি কাজে লাগিয়েছেন। তাই এই নগরীর ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য দরকার আরিফকেই। তবে দল নির্বাচনে না গেলে তাদের অবস্থান কী হবে সেটি তার জানা নেই বলে জানান এই প্রবীণ নেতা।

এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তাঁর দল যে কারণে নির্বাচনে যেতে চায় না তার অন্যতম হচ্ছে ফল পাল্টে দেওয়ার রাজনীতি। আর ইভিএম হচ্ছে ‘ফল’ পাল্টে দেওয়ার সেই মেশিন। কারণ ইভিএমে সব ‘সিস্টেম’ করা থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমি যেখানেই যাচ্ছি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। লোকজন আমাকে ভোট দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। সিলেটের লোকজন আমাকে চায় দাবি করে মেয়র বলেন, আমি তাদের কথা ফেলতে পারছি না। এ কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ২০ মে সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে জনসভার মাধ্যমে তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।

আরিফুল হক বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এতেই প্রতীয়মান হয় সুষ্ঠু নির্বাচনের যে ধারা সেটি এবারের নির্বাচনে এখনও অনুপস্থিত।

এদিকে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনরা আছেন আতঙ্কে। তাঁদের ভয় নিজ দলের নেতাদের নিয়ে। গত নির্বাচনে সিলেটের জনপ্রিয় নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান যে কারণে আরিফুল হকের কাছে হারেন সেখানে দলের নেতাদের বড় ‘ভূমিকা’ ছিল নৌকা ডুবিয়ে দেওয়া। আর সেটিই ঘটেছে গত নির্বাচনে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনোয়ারুজ্জামানের খুব কাছের ওই নেতা এই প্রতিবেদককে জানান, এখন পর্যন্ত ব্যক্তি আনোয়ারুজ্জামান প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে গেছেন। দলের কোনো সিনিয়র নেতাও তাঁর পাশে নেই। ঈদুল ফিতরের সময় পররাষ্টমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাঁদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটালেও তা প্রতীয়মান হয়নি। গত এক সপ্তাহে সিনিয়র নেতাদের তাঁর পাশে দেখা মেলেনি। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার রাতে সিটি নির্বাচন নিয়ে নগরীর তালতলায় একটি হোটেলে নগর আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আরিফকে ‘চ্যালেঞ্জ’ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঠিক থাকলে নির্বাচনে কোনো ‘কারসাজি’ না হলে আনোয়ারুজ্জামান বিজয়ী হবেন বলেও আশাবাদী ওই নেতা।

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি আশাবাদী। দলে কোনো বিভেদ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও নির্বাচনের ৫২ দিন বাকি। ওই সময়ের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন এ লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁর প্রচারণা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে দলে কোনো বিভেদ নেই। যাঁরা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাঁদের মনে যে দুঃখ ছিল সেটি অনেকটা কেটে গেছে। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।

এ ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন বলেন, আমাদের নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমাদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে বিভেদ নেই। আমার ছোট ভাই আসাদ উদ্দিনও ছিল এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেও নগর আওয়ামী লীগের বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিল এবং দলের প্রার্থীর বিষয়ে ছিল পজেটিভ। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী নিয়ে আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.