চার দশকের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে ক্ষান্ত দিল কুর্দিরা, বিলুপ্তি ঘোষণা

0
21
কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)

স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবিতে চলা চার দশকের সশস্ত্র বিদ্রোহের ইতি টানলো কুর্দিরা। আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)।

সোমবার (১২ মে) এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। খবরটি প্রকাশ করেছে পিকেকে ঘনিষ্ঠ ফিরাত নিউজ এজেন্সি।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করছি। তুর্কি-কুর্দি সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সময় এসেছে।

সংগঠনটি আরও জানায়, এখন থেকে কুর্দি রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও একটি গণতান্ত্রিক কুর্দি জাতি গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পিকেকে তাদের ‘ঐতিহাসিক মিশন’ শেষ করেছে।

কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) এ বিবৃতির বিষয়ে অবশ্য এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি তুর্কি সরকার।

পিকেকের এই সিদ্ধান্তে তুরস্ক ও ইরাকের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রায় ৪০ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটল। ৪০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এই সশস্ত্র সংঘাতে।

উল্লেখ্য, পিকেকে প্রধান আবদুল্লাহ ওজালান। ১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক বিবৃতিতে সব সশস্ত্র গ্রুপকে ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সে ধারাবাহিকতায় এবার এলো সংগঠন বিলুপ্তির আনুষ্ঠানিক এ ঘোষণা।

উল্লেখ্য, কুর্দিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছিল পিকেকে। তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এই গোষ্ঠীকে।

পিকেকের বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে সহিংসতায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে আড়াই বছরের একটি অস্ত্রবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে সহিংসতার মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুর্দি-সমর্থিত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কঠোর অবস্থানে যায় তুরস্ক সরকার। অনেক নেতাকেই গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেয়।

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার কুর্দি-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেও হামলা চালাতে থাকে তুরস্ক-সমর্থিত বাহিনীগুলো। গত মাসে কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসকে নির্মূল করার জন্য সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে আহ্বান জানায় তুরস্ক।

তবে, ওজালানের আহ্বানের পর এসব সংঘাত থামার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তুরস্কের কুর্দি নেতারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি অঞ্চলজুড়ে বসবাস করেছে কুর্দি গোষ্ঠী। বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্য বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রে ভাগ হলেও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র পায়নি কুর্দিরা। ইরাক, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক—এই চারটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে তারা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.